চলে গেলেন আরেক তেরেসা

প্রয়াত সিস্টার নির্মলা। মাদার তেরেসার পর মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রধানের মৃত্যুতে শোকাহত বিশ্ব। সোমবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে শিয়ালদহের মিশনারিজ অব চ্যারিটির কনভেন্ট সেন্ট জনস হাউসে মৃত্যু হয় সিস্টার নির্মলার। সেখানেই থাকতেন মাদারের এই যোগ্য উত্তরসূরি। যিনি মাদারকে সম্মান জানাতে সিস্টার হিসেবেই পরিচিত হতে চেয়েছেন। প্রয়াণের সময় তার বয়স হয়েছিল ৮১।
মঙ্গলবার সকাল থেকে মরদেহ শায়িত রাখা হয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন লাগোয়া সেন্ট জনস চার্চে। বিকাল ৬টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। বুধবার সকাল ৯টায় দেহ আনা হবে মাদার হাউসে। বিকাল ৪টায় মাদার হাউসে প্রার্থনার পর তার দেহ আনা হবে সেন্ট জনস চার্চে। সেখানেই সমাধিস্থ করা হবে মরদেহ। তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীসহ বিখ্যাতরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ শেষকৃত্যে যোগ দেবেন। আসবেন ভ্যাটিক্যানের প্রতিনিধিরাও। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী চার্চে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ছিলেন ঊষা উত্থুপও। মুখ্যমন্ত্রী মাদার তেরেসার সূত্র ধরে সিস্টার নির্মলার সঙ্গে তার সম্পর্কের গভীরতার কথা শোনান। ১৯৯২ সালের দাঙ্গায় একসঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথাও জানান। তিনি বলেন, ‘এই মৃত্যু ব্যক্তিগত ক্ষতি। বিশ্বের ক্ষতি। গত ৭ এপ্রিল সিস্টার নির্মলা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তার চিকিৎসক উডওয়ার্ডও সম্প্রতি প্রয়াত হন। পরে ১৩ জুন সিস্টার আবার অসুস্থ হন। সিএমআরএই-তে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে মাল্টি অর্ঘান ফেলিওয়ের জন্য চার্চের হাউসেই নিয়ে আসা হয় দু’দিন আগে। মিশনারিজ অব চ্যারিটি তৈরির সময় মাদারের সঙ্গে দু’জন সন্ন্যাসিনী হন। তাদের মধ্যে অন্যতম সিস্টার নির্মলা। তার জন্ম রাঁচিতে, ১৯৩৪ সালের ২৩ জুলাই। নির্মলা যোশীর বাবা-মা আদতে নেপালের বাসিন্দা ছিলেন। আসল নাম কুসুম যোশী। আট বোন, দুই ভাই। বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
তার বাবা ব্রিটিশ আর্মির অফিসার ছিলেন। হিন্দু পরিবারের সন্তান হয়েও মাদারের কাজে উৎসাহ হয়ে খ্রিস্টান ধর্ম নেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করার পাশাপাশি আইনের পাঠও নিয়েছেন। পাটনা উওমেনস কলেজে এমএ করার সময়ই মাদার তেরেসার সঙ্গে পরিচয় হয়। তারপরই বদলে যায় জীবন। মাদারের মৃত্যুর আগেই সিস্টার নির্মলাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দায়িত্ব নিতে চাননি। চ্যারিটির উদ্যোগে পানামা সফরে প্রথম সিস্টার হিসেবে বিদেশযাত্রা করেন। ১৯৯৭ সালের মার্চে মাদার তেরেসার মৃত্যুর পর চ্যারিটির সুপিরিয়র জেনারেলের দায়িত্ব নেন তিনি। তবে ‘মাদার’ আখ্যায় ভূষিত হতে চাননি। ২০০৯ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ সম্মান পান। ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ পর্র্যন্ত মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন সিস্টার নির্মলা। তারপর দায়িত্ব নেন জার্মানি-জাত সিস্টার মেরি প্রেমা পিয়েরিক। টুইটে শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘মানুষের সেবায় নিজেকে অর্পণ করেছিলেন সিস্টার নির্মলা। দুস্থদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি। তার আত্মা শান্তি পাক।’ সন্ত যোহান চার্চের ফাদার মলয় ডিকোস্টা সিস্টার জানান, উনি খুব সহজ, সরল ছিলেন। কোনো মানুষের সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যেত তার সঙ্গে কথা বলেই।
সিস্টার নির্মলা
জন্ম : ২৩ জুলাই ১৯৩৪
মৃত্যু : ২৩ জুন ২০১৫
কর্মস্থল : মিশনারিজ অফ চ্যারিটি

No comments

Powered by Blogger.