ঘৃণা ও বমনের অরুচি by গোলাম মাওলা রনি

আদি বেলা থেকেই আমার মাথায় হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত সব বিষয় চেপে বসে। তখন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ওসব হাবিজাবি চিন্তা করতে থাকি এবং একাকী নীরবে চেষ্টা করতে থাকি- কী করে ওসব বাস্তবায়ন করা যায়। গ্রামে থাকতে ছোটবেলায় প্রায়ই শুনতাম- ‘গাব মারার জায়গা পাও না’, আর ‘গাব মারাইও না’ ইত্যাদি ইঙ্গিতপূর্ণ কথা। গাব মারার রহস্য উন্মোচনের জন্য প্রায়ই কোনো জঙ্গলে ঢুকে গাবগাছে উঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতাম আর আনমনে কাঁচা-পাকা গাব নিচের দিকে ছুড়ে মারতাম। এ ছাড়াও আমরা অনেক কিছু নিয়ে গবেষণা করেছি। একবার গবেষণা করলাম কেছুয়ার তেল নিয়ে। কেঁচোকে আমাদের এলাকায় বলা হতো ‘কেউচ্চা’। কেউ কেউ আবার একটু শুদ্ধ করে বলত ‘কেছুয়া’। গ্রাম্য ডাক্তারেরা বোতলে করে একধরনের তেল নিয়ে গ্রামগঞ্জে ফেরি করতেন আর বলতেন, এইগুলো কেছুয়ার তেল। এই তেল মালিশ করলে এটা হয় কিংবা ওটা হয়- শেষমেশ মহামর্দ হওয়া যায়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ছোট ছোট শিশিতে ভরা সামান্য একটু তেলের দাম ওই আমলে অর্থাৎ ১৯৭৩-৭৪ সালে বিক্রি করা হতো পাঁচ টাকা করে। কেছুয়ার তেল বানানোর প্রকল্প হাতে নিলাম এবং বিরাট এক লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে মুরুব্বিদের হাতে ন্যক্কারজনকভাবে অপমানিত হয়ে প্রকল্প স্থগিত করতে বাধ্য হলাম।
ইদানীং খুব করে ভাবছিলাম মানুষের ঘৃণা করার প্রবণতা এবং বমি করার কারণগুলো নিয়ে। কেন মানুষ ঘৃণা করে এবং কেন মানুষের বমি করার ইচ্ছা জাগে- এমনতরো সরল ও স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে আমি ভাবছিলাম না। ভাবছিলাম মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক পচনশীলতা এবং চারিত্রিক অধঃপতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। কেন একজন শিক্ষিত মানুষের চিন্তাশক্তি পচে যায় কিংবা লোকটি কেনই বা নিজে বহু কষ্ট ও কসরত করে তার অর্জিত জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞাকে পচিয়ে ফেলে এবং নিকৃষ্টতর চরিত্রের অধিকারী হওয়ার জন্য পাগলামো শুরু করে। মানুষ যখন আপন চেষ্টায় চিন্তা ও চরিত্রে পচন ধরিয়ে দেয়, তখন সমাজের অপরাপর সুস্থ মানুষেরা ওই লোকটিকে ঘৃণা করতেও ঘৃণাবোধ করে। পচা লোকটির ওপর বমন উদ্গিরণ করতেও অরুচি প্রকাশ করে।
ঘৃণা ও বমনবোধের অরুচি নিয়ে ভাবতে ভাবতে যখন কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না, তখন হঠাৎ একটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান আমার চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিলো। সুন্দরী এক যুবতী হলুদ শাড়ি পরে চমৎকার মেকআপ নিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছিলেন। আলোচনার ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছিল না ওটা কি টকশো, নাকি কৃষিবিষয়ক কোনো অনুষ্ঠান। দু-তিনজন বক্তার বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, তারা চিঁচিঁ গলায় গালাগাল-জাতীয় বিভিন্ন শব্দমালা উচ্চারণ করে কাউকে অভিশাপ দিয়ে দানব বানাচ্ছেন, আবার কাউকে আশীর্বাদের প্রসাদ দিয়ে দেবতা বানাচ্ছেন। বক্তাদের বক্তব্য শুনে যুবতীটি মুখের মধ্যে কলমের কিপসহ পেছনের দিকটা বারবার ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এবং সামনের দুটো দাঁত দিয়ে হালকাভাবে কামড় দিয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব দেখাচ্ছেন। কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে আয়েশ করে পা দোলাচ্ছেন এবং চোখেমুখে কখনো রোদ আবার কখনো বৃষ্টির একটি আমেজ ফুটিয়ে তুলে বক্তাদের উৎসাহ জোগাচ্ছেন।
বক্তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫-৬৬ বছর। পেশায় একটি অখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গলার স্বর মেয়েদের মতো। কিন শেভ করা। লক্ষ করলে দেখা যাবে, ভদ্রলোকের থুতনির নিচের মাংস এবং চামড়া বয়সজনিত কারণে ঝুলে পড়েছে। গলার চামড়াও বেশ কুঁচকে গেছে। তিনি অতি দ্রুত কথা বলছেন এবং সারা দুনিয়ার অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে পছন্দমতো উদাহরণ টেনে এনে নিজের বক্তব্যের সাথে জুড়ে দিয়ে বিরাট কিছু করে ফেলার জন্য কসরত করছেন। উপস্থাপিকা মুচকি মুচকি হেসে হালকা করে ঠোঁট দুটো একটু ফাঁক করে কিছু একটা বলতে গিয়েও বারবার থেমে যাচ্ছেন বৃদ্ধ অধ্যাপকের বেপরোয়া গতির কারণে। দেখলাম, ভদ্রলোক তার ঈষৎ লম্বা চুলগুলো একটি রাবারের ব্যান্ড দিয়ে পেছনের দিকে ঝুঁটি বানিয়ে রেখেছেন। মহিলাদের মতো লম্বা ঝুঁটি নয়, আবার একেবারে ছোটও নয়। দু-তিন ইঞ্চি লম্বা।
টিভি বন্ধ করে নতুন করে ভাবতে বসলাম- কেন একজন ৬৫-৬৬ বছরের বুড়ো লম্বা চুলে কলপ মেখে কুচকুচে কালো করে তাতে আবার ঝুঁটি বাঁধতে যাবেন, কেনই বা জীবনসায়াহ্নে এসে সত্য-মিথ্যা দিয়ে বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে কাউকে বড় এবং কাউকে ছোট বানানোর চেষ্টা করবেন? নিজের অর্জিত জ্ঞান কেন তিনি অন্যকে ঢেলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন? চিন্তায় রাতে ঠিকমতো ঘুম এলো না। পরের দিন বিষয়টি নিয়ে এক পণ্ডিত বন্ধুর সাথে আলাপ করলাম। বন্ধুটি আমার অসাধারণ মেধাবী এবং একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মাঝে মধ্যে কবিতা তিনি লেখেন। টুকটাক মনোবিজ্ঞানের চর্চা এবং বন্ধু মহলে তা বিনামূল্যে বিতরণ করেন। আমার বর্ণনা শুনেই তিনি বললেন, বৃদ্ধ লোকটি ঝুঁটি বেঁধে অল্পবয়সী টিনএজ মেয়েদেরকে আকর্ষণ করতে চান। নিজেকে ব্যতিক্রমী হিসেবে উপস্থাপন করে অল্পবয়সী ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় সাজার চেষ্টা থেকেই বুড়ো বয়সে লোকটিকে অদ্ভুত ভীমরতিতে ধরেছে।
মনে মনে বৃদ্ধকে ঘৃণা করতে গিয়ে তার পেশার আরো অনেকের কথা ভাবতে শুরু করলাম। বেচারা একটি অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। টাকা-পয়সা কিংবা খ্যাতির মোহ অথবা সারা জীবনের অপ্রাপ্তির উদগ্র বেদনা থেকে তিনি হয়তো মেয়েদের মতো নাকিসুরে ‘চোয়া চোয়া’ শব্দে ক্ষমতাসীনদের পদলেহনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারই স্বগোত্রীয় ব্যক্তিরা যারা কিনা দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ইতোমধ্যে যশ, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত ইত্যাদি সবই পেয়েছেন- তারা কেন ক্ষমতার পেছনে ছোটেন? বাংলাদেশের সেরা মেধাবী মানুষদের মাথায় যদি পচন ধরে, তবে এ জাতি আশ্রয় নেবে কোথায়! যারা দুর্বল, অকর্মণ্য, অপদার্থ, লোভী, চরিত্রহীন, মেধাহীন এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তারা যদি স্বার্থসিদ্ধির জন্য কারো পদলেহন করে, তখন হয়তো তাকে ঘৃণা জানানো যায়। কিন্তু মেধাবীরা যদি অপকর্ম করে, তবে তো তারা ঘৃণিত হওয়ারও অযোগ্য হয়ে পড়েন!
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে দু’টি অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে যাবো। এক শিক্ষিকার সাথে টকশো করতে গিয়ে তার হাজারো নীতিকথার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়লাম। ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে তিনি শুধু বলেই গেলেন যে, এ দেশের পলিটিশিয়ানরা চরিত্রহীন, অশিক্ষিত, বর্বর, দেশপ্রেমবর্জিত ও দুর্নীতিবাজ। পরের দিন ভদ্রমহিলা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে যা জানলাম, তাতে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম। একাধিক বিয়ে ও বিচ্ছেদের বাইরেও রয়েছে তার বহুমুখী স্ক্যান্ডাল। আরেকটি টকশোতে তিনি যখন আগের মতো বলা শুরু করলেন, তখন বেশ আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে বললাম, ‘দয়া করে চুপ করুন। একটি ছোট প্রশাসনিক পদ, বিদেশ ভ্রমণ কিংবা সামান্য সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য আপনারা যেভাবে তৃতীয় শ্রেণীর রাজনীতিবিদের পেছনে ঘুরঘুর করেন, তা দেখে গৃহপালিত ইতর প্রাণীরাও লজ্জা পেয়ে যায়।’ ভদ্রমহিলা একদম চুপ হয়ে গেলেন। শো শেষ হলে তিনি প্রশ্ন করলেন- রনি ভাই! কথাগুলো কি আমাকে বললেন?
হাসিমুখে বললাম- ‘না, আপনাকে বলিনি। কমনলি বলছি।’ তিনি সহাস্যে উত্তর করলেন, যাক বাবা বাঁচা গেল।
অন্য একটি অনুষ্ঠান চলছিল টিএসসিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আমিও মঞ্চে বসা। একজন শিক্ষক যিনি কিনা আমার ছাত্রজীবনে হলের প্রভোস্ট ছিলেন এবং একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার জন্য তখন তুমুল লবিং করে যাচ্ছিলেন- তিনি বক্তব্য দিতে এগিয়ে গেলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তিনি সরকারি দলের এমন সব এজেন্ডা বর্ণনা করলেন, যা শুনে কট্টরপন্থী সরকার সমর্থকেরাও লজ্জা পেতে শুরু করলেন। বক্তৃতা শেষে তিনি আমার পিঠচাপড়ে জিজ্ঞেস করলেন- রনি, কেমন হলো! বললাম- স্যার, আপনি নিশ্চিত ভিসি হবেন। তবে বক্তৃতার শেষে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বললে ভিসি হওয়াটা আরো একটু তাড়াতাড়ি নিষ্পন্ন হতো। তিনি সরল বিশ্বাসে বললেন, আমি কি পুনরায় ডায়াসে ফিরে গিয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে আসব। আমি বললাম, আজ আর লাগবে না! আগামীতে সতর্ক হলেই চলবে! সম্মানিত পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, তিনি এখন একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর!
শিক্ষাঙ্গনের ঘৃণার অযোগ্য মানুষের পরে আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর উপাদান হলো ভণ্ডপীর, ফকির ও ধর্মব্যবসায়ীরা। মুখে লম্বা দাড়ি, পরনে বিশাল জোব্বা, গায়ে আতর, চোখে সুরমা, হাতে তসবি, মাথায় পাহাড়ের মতো উঁচা টুপি, পরনে বিশেষ রঙের লুঙ্গি বা পাজামা এবং আগে-পিছে কয়েকজন সাগরেদ। কপালে বিশাল কালো দাগ এবং মুখভর্তি পান নিয়ে বেশ কয়েকজন লোককে দেখতাম সংসদের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে। কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মুখোমুখি হতেই তারা লম্বা করে একটা সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেন হ্যান্ডশেক করার জন্য। এরপর আরো একটু পাত্তা পেলে কোলাকুলি না করে ছাড়তেন না। পরিচয়ের পর্ব শুরু হতো নিজের মরহুম আব্বা হুজুরের বংশলতিকা বর্ণনার মাধ্যমে। তারপর নিজের এলমে মারেফাত এবং ভবিষ্যৎ বলার দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ কিছু আকর্ষণীয় তথ্য-উপাত্ত হাজির করতেন। নেতাদের মধ্যে যাদের চিত্ত নরম এবং যারা মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তারা অতি সহজেই এদের টোপ গিলে ফেলতেন। এর বাইরে যারা আগামীতে মন্ত্রিত্ব হারানোর ভয় এবং পুনরায় নমিনেশন না পাওয়ার শঙ্কার মধ্যে থাকতেন, তারাও ধরা খেতেন। এরপর শুরু হতো তদবিরের পালা। প্রাথমিক তদবির হলো- বাবে রহমত বা আবে রহমত জাতীয় আতর ব্যবহার। তারপর রুবি, ক্যাটস আই, পান্না ইত্যাদি পাথর দিয়ে আংটি ব্যবহারের নির্দেশ। তৃতীয় ধাপে থাকে আরো সব অপ্রকাশ্য ভয়াবহ তদবিরের সুপারিশ। এদের খপ্পরে পড়ে কত বড় বড় মানুষ যে প্রতারিত হয়েছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
ধর্মের নাম করে এবং ধর্মের লেবাস পরে রাজনৈতিক দলের হোতা সেজে নেতা-নেত্রীর নির্দেশমতো কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যাদানকারী ভণ্ডের সংখ্যা এই বঙ্গে দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। তারা দলের চামচা হিসেবে টিভিতে যান- আবার সভা-সমিতিতেও সমানতালে গলাবাজি করেন। নেতা-নেত্রীর নির্দেশে তারা মাঝে মধ্যে রাজপথে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন এবং যাকে-তাকে ঘায়েল করতে রাজনৈতিক ফতোয়া দিয়ে বসেন। এসব লোকের বাড়াবাড়ি দেখে অনেক সময় রাগে-অপমানে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে ইচ্ছে করে।
আলেম বা ওলামা শব্দটি উচ্চারিত হলেই আমার মানসপটে ফুটে ওঠে ইমাম আবু হানিফা রহ:-এর নাম। অর্ধবিশ্বের অধিকর্তা এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী খলিফা আল মনসুর চাইলেন ইমাম আবু হানিফা রহ:কে সাম্রাজ্যের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে। ইমাম সাহেব সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি কোনো স্বৈরাচারীর অধীনে চাকরি করবেন না। অপমানিত খলিফা ইমাম সাহেবকে জেলে ঢুকালেন, এমনকি চাবুক পর্যন্ত মারলেন। কিন্তু সম্মানিত আলেম মাথা নোয়াননি। অন্য দিকে পীর শব্দটি শোনার সাথে সাথে মনে পড়ে গাউসুল আজম আবদুল কাদির জিলানী রহ:-এর কথা। জীবিকার প্রয়োজনে হালচাষ করতেন, মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু হারাম উপার্জনের দান গ্রহণ করতেন না। কোনো হারাম উপার্জনকারী কোনো দিন তার দরবারে হাজির হতেও সাহস পেতেন না। এমনকি বাগদাদের খলিফাও নন।
অন্য দিকে, ওলি আল্লাহর কথা বললে এই পাক ভারতে সবাই খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি ও খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার নাম স্মরণ করে থাকেন। কই তারা তো কোনো দিন কোনো রাজা-বাদশাহর দরবারে যাননি! বরং উল্টো রাজা-বাদশাহরা ফকিরের মতো তাদের দরবারে উপস্থিত হতেন।
এখন উপসংহার টানার পালা। শিরোনাম প্রসঙ্গে আবার চলে যাই। সাধারণ মানুষ যখন সাধারণভাবে গুনাহ করে, তখন অপরাপর সাধারণ মানুষ তাদের ঘৃণা করে। কিন্তু মনুষ্য সমাজে যারা নিয়ত বিশ্বাস, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আসনে বসে গুনাহ করে, তখন সেসব মানুষকে ঘৃণা করতেও রুচিতে বাধে। সাধারণত ময়লা-আবর্জনা কিংবা দুর্গন্ধের কবলে পড়লে মানুষের বমি চলে আসে। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের কৃত অপরাধের দ্বারা এমনই ঘৃণার বস্তুতে পরিণত হয়ে যায় যে, তাদের দেখলে অন্যদের বমি করার প্রবণতাও বন্ধ হয়ে যায়- অর্থাৎ বমনেও অরুচি চলে আসে।

No comments

Powered by Blogger.