কাশ্মীরকে শান্তির দ্বীপে পরিণত করতে চাই -মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিয়ে মুফতি সাঈদ

(জম্মু ও কাশ্মীরের নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গতকাল কাশ্মীরের সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাজ্জাদ লোনকে আলিঙ্গন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (বাঁয়ে)। পাশে রয়েছেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদ ও উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিং (ডানে)। সাজ্জাদ লোন পিডিপি-বিজেপি জোট সরকারে বিজেপির কোটায় মন্ত্রী হয়েছেন l ছবি: এএফপি) ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (পিডিডি) প্রধান মুফতি মোহাম্মদ সাঈদ। গতকাল জম্মুর জেনারেল জোরাবার সিং মিলনায়তনে রাজ্যের দ্বাদশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মুফতি সাঈদ। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে জোট বেঁধে এ রাজ্যে সরকার গঠন করছে পিডিপি। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। ভোটের পর দুই মাস আলোচনার পর পিডিপি ও বিজেপি সরকার গঠনে সম্মত হয়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন। তাঁর দল বিজেপির জন্য গতকাল ছিল একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা, দলটি এই প্রথম জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে ক্ষমতায় বসার স্বাদ পেল। অন্যদিকে প্রায় এক দশক পর কাশ্মীরে ক্ষমতায় এল পিডিপি।
শপথ গ্রহণের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী সাঈদ বলেন, ‘বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ করতে পাকিস্তান, হুরিয়াত এবং জঙ্গিরাও সহায়তা করেছে।’ তাঁর এ বক্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পর্যুদস্ত কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মুফতি সাঈদ। গতকাল তিনি বলেন, ‘আমরা এই জোটকে ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ রাজ্যের মানুষের মন আর হৃদয় জয় করাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী আর আমার একটাই লক্ষ্য, জম্মু-কাশ্মীরকে শান্তির দ্বীপে পরিণত করা।’
জোট সরকারের চুক্তি অনুসারে জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা নির্মল সিং রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন। তিনি এখন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সরকারের মেয়াদ হবে ছয় বছর। ৭৯ বছর বয়সী মুফতি সাঈদের মন্ত্রিসভায় পিডিপি-বিজেপি মিলিয়ে মোট সদস্যের সংখ্যা ২৫। মুফতি সাঈদের মন্ত্রিসভায় বিজেপির কোটায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থেকে স্বাভাবিক রাজনীতিতে আসা সাজ্জাদ গনি লোন। তিনি শপথ নেওয়ার পর মোদি তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় আসন সংখ্যা ৮৭। গত বিধানসভা নির্বাচনে পিডিপি সর্বোচ্চ ২৮টি আসন পায়। বিজেপি পায় ২৫টি। সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসন কেউ না পাওয়ায় জোট সরকার ছাড়া আর উপায় ছিল না। গত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী বিজেপি আশা করেছিল বিধানসভা ভোটে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর জয়ের। এ জন্য তারা ‘মিশন ৪৪+’ সফর করতে উঠেপড়ে লাগলেও পায় মাত্র ২৫ আসন।
বিজেপি ও পিপিডি দুটি দল রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে ভিন্ন ধারার। এ কারণে তারা ‘ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি’র মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করবে বলে সম্মত হয়েছে। কয়েক দশক ধরে যেসব বিষয়ে মতভিন্নতার কারণে দুটি দল দূরে ছিল, দুই মাস ধরে আলোচনায় সেসব বিষয়ে কিছু সমঝোতা হয়েছে। মতভিন্নতার প্রধান দুই বিষয় ছিল কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়াসংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করার অধিকারসংক্রান্ত আইন আফসা। সেই আফসা প্রশ্নে গতকাল মুফতি সাঈদের মন্তব্য ছিল, ‘সেনাবাহিনীর কার্যক্রম দায়িত্বশীল করার চেষ্টা করা হবে।’
মুফতি সাঈদ ভারতের একমাত্র মুসলিম মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভার নির্বাচনের পর তিনি কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের পক্ষ থেকে সরকার গঠনে শর্তহীন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

No comments

Powered by Blogger.