মিল্ক ভিটায় অচলাবস্থা- মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা দুধ কারখানায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে_ এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে শনিবার সমকালে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ছাঁটাইকৃত ৭০ জন কর্মীর চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং তারই বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশে প্যাকেটজাত তরল দুধ সরবরাহের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটিতে। সমবায়ীদের এ প্রতিষ্ঠানটিতে দুধ সরবরাহ করেন চুক্তিভুক্ত খামারিরা। তরল দুধ বাজারজাত করার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। তারা আড়ং ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করে দুধ বাজারজাত করার জন্য। দুধ উৎপাদকদের সময় মোটেই ভালো যাচ্ছে না। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সমকালে তাদের সমস্যা নিয়ে 'সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ :হায়রে দুর্ভাগা দেশ!' শিরোনামের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়_ 'সংবাদপত্রের যে ছবি পাষাণ হৃদয় গলিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা ঘটবে কি? সোমবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার একদল দুগ্ধ উৎপাদক প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ সড়কে ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা এ অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ব্র্যাক ডেয়ারি সেন্টারের সামনে। তাদের অভিযোগ_ চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন বিপুল লোকসান যাচ্ছে।' মিল্ক ভিটার চিত্র আরও করুণ। কারণ তরল দুধের প্রধান অংশের জোগান আসে এ প্রতিষ্ঠান থেকে। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলের আন্দোলনের ৫৩ দিনে বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা ইউনিটে অন্ততপক্ষে ২৭ বেলা দুধ না কেনায় এ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার খামারি চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। উৎপাদিত দুধ বাজারে ভোক্তাদের কাছে পেঁৗছাতে না পারলে খামারিরা তা নিয়ে কী করবেন? হরতাল-অবরোধের কখন অবসান ঘটবে, সেটা তাদের জানা নেই। মিল্ক ভিটা, আড়ং প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ভয় নাশকতাকে। রাজধানী ঢাকা এবং এ ধরনের বড় প্রতিষ্ঠানের অনেক গাড়ি দুধ নিয়ে মহাসড়কে চলার পথে শঙ্কায় থাকে। এ অবস্থায় যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা তাদের জন্য বাড়তি সমস্যার কারণ হয়। কিন্তু সমকালের প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায় যে, নতুন করে শুরু করা আন্দোলন প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছে। যাদের চাকরি পুনর্বহালের জন্য আন্দোলন করা হচ্ছে তাদের ছাঁটাই করা হয়েছিল অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায়। তারা কীভাবে প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে রেখে খামারিদের দুধ বিক্রি করতে যেতে বাধা দিতে পারছে? তাদের কারণে ট্যাঙ্কারে ঢাকায় দুধ পাঠানোতেও সমস্যা হচ্ছে। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাঁটাইকৃতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ইস্যু নিয়ে মিল্ক ভিটা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে পরিচালকের দ্বন্দ্ব রয়েছে। যে কোনো আদর্শ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এ ধরনের মতপার্থক্য নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তদুপরি, এ প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তারাই নিয়োগ দেয়। পচনশীল পণ্য বাজারজাত করায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কেন সময়মতো হস্তক্ষেপ করছে না? সরকারি কর্তাব্যক্তিদের এটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, চলমান হরতাল ও অবরোধের কারণে খামারিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। উৎপাদিত দুধ মিল্ক ভিটার কাছে বিক্রি করতে না পারায় ইতিমধ্যেই তাদের ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি। এ আন্দোলন এখন অনেকটাই স্তিমিত। কিন্তু প্রায় আট বছর আগে দুর্নীতির অভিযোগে ছাঁটাইকৃতদের চাকরিতে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন প্রতিষ্ঠানটিকে ফের অচল করে দিয়েছে। এটা তো 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'। দ্রুত এর অবসান ঘটাতে মিল্ক ভিটা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.