হুমকির কথা আইজিকে আগেই জানানো হয়েছিল

অভিজিতের শেষ যাত্রায় খুনিদের শাস্তি দাবি
শেষবারের মতো পুত্রকে দেখছেন পিতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্লগার অভিজিৎ রায়ের দেহ দান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে অভিজিৎ রায়ের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, এ হত্যাকাণ্ড সরকারের একটি ব্যর্থতার প্রতীক। এর আগে মৌলবাদী শক্তি অভিজিৎকে ধ্বংস করবে, হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। এ সমস্ত মেসেজ তখন আমি পুলিশের আইজি-ডিআইজি সবাইকে জানিয়েছিলাম। তারা বলেছে, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিন স্তরের, চার স্তরের। কিন্তু জঙ্গি গোষ্ঠী কতটা শক্তিশালী তাদের কাছে আমাদের তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা দরিদ্র- অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ। অধ্যাপক অজয় রায় খুনিদের চিহ্নিত করে বিচার করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এফবিআই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা বলেছে, হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তারা সহযোগিতা করতে চায়। এ বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে অভিজিতের মরদেহ অপরাজেয় বাংলায় নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আনা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এর আয়োজন করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মরদেহের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মীজানুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, চারুকলা অনুষদ, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক সদরুল আমিন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, গণফোরাম, বাসদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণজাগরণ মঞ্চ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, স্থপতি রাজীব হায়দারের বাবা-মাসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় অভিজিতের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ধর্মান্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী অভিজিৎকে হত্যা করেছে। অনেকে ফেসবুকে তাকে হত্যা করা হবে বলে স্ট্যাটাস দিয়েছে। তিনি অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, লেখক হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিতের হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। সামাজিকভাবে এসব ঘটনা মোকাবিলা করতে হবে। শাহরিয়ার কবির বলেন, অভিজিৎকে দীর্ঘদিন ধরে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হলেও দেশে ফেরার পর তাকে কেন নিরাপত্তা দেয়া হয়নি। সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখনও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে নি। অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে তাদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এর জন্য আমরা সবাই দায়ী। তবে সরকার বেশি দায়ী। কারণ তারা অভিজিতের নিরাপত্তা দিতে পারে নি। এছাড়া জঙ্গি নির্মূলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করতে পারে নি। স্থপতি রাজীব হায়দারের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বলেন, যারা হত্যা করেছে তারা ধর্মীয় উগ্রপন্থিতে বিশ্বাসী। মৌলবাদীদের মূলশক্তির বিচার না হলে এদের বিচার হবে না। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতের কি সম্পর্ক রয়েছে জনগণ তা জানতে চায়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বেলা ১২টায় অভিজিতের মরদেহ নেয়া হয় টিএসসি সংলগ্ন হামলার স্থানে। সেখান থেকে মরদেহ বাবা অজয় রায়ের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় আনা হয়। পরে বিকালে অভিজিতের ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাবিতে আজ ধর্মঘট: অভিজিৎ হত্যার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট আহ্বান করেছে। একই সঙ্গে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোট নেতৃবৃন্দ।

No comments

Powered by Blogger.