মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ লাখ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবহার অযোগ্য ওষুধ কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। এ ঘটনার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। দেশের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালে সরকারের পক্ষ থেকে ওষুধ প্রদান করা হয়। কিন্তু চিকিৎসাপ্রার্থী মানুষ সে ওষুধের দেখা পান না, কোথাও কোথাও দু-চারটি প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড ট্যাবলেট দেয়া হলেও বেশিরভাগ মানুষই শূন্য হাতে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফেরেন মাত্র। বেশিরভাগ সময় আবার ডাক্তারের দেখাও মেলে না যে ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যাবে। ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই- সরকারি হাসপাতালের এ চিত্র প্রায় সর্বত্র। এখনও দেশের বেশিরভাগ মানুষ তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁকের জগতে বিচরণ করছে। অথচ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত সরকারি টাকার ওষুধ গুদামেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হচ্ছে! সেগুলোকে ধ্বংস করতে আবার কঠোর গোপনীয়তার আশ্রয় নিতে হচ্ছে!
যার বা যাদের গাফিলতি, অলসতা কিংবা দুর্নীতির কারণে এমনটি ঘটছে, গরিব মানুষের চিকিৎসা নিয়ে যুগের পর যুগ এমন নিষ্ঠুর প্রহসন চলছে- সেই ব্যক্তিদের কোনো সাজা হচ্ছে না। ফলে দণ্ড পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার অধিকার থেকে।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করলেও অজুহাতের কমতি নেই সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালনকারীদের। হাসপাতালের সিনিয়র স্টোরকিপার বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধ তিন মাস সময় থাকতে অনেকটা জোর করেই সরকারি কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ অনিয়ম বা দুর্নীতির শেকড় দেখা যাচ্ছে গভীরে। এ শেকড়ের শাখা-প্রশাখাও নিঃসন্দেহে অল্প নয়। সোজা কথায়, গরিব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অবহেলা-গাফিলতি চলছেই। বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার এ উদাহরণ কেবল সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে নয়, অন্যান্য বিভাগেও রয়েছে বলেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বত্র চলছে নৈরাজ্য। দুর্নীতিবাজ ও কর্তব্য পালনে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে এ নৈরাজ্য থেকে যেমন সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করা যাবে না, তেমনি সরকারের ব্যবস্থাপনাও ভেঙে পড়বে। কারণ যে বেড়ায় ক্ষেতের শস্য সাবাড় করে, সে বেড়া একসময় ক্ষেতটিকেও সাবাড় করে ফেলবে। সেই পরিণতির আগেই সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.