নতুন প্রকল্পের চাপে পরিকল্পনা কমিশন by মামুন আব্দুল্লাহ

চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্র্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) চূড়ান্তকরণ নিয়ে চাপের মুখে পড়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেটে বড় আকারের বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবায়নে গতি না থাকায় মাঝপথে এসে এ বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়। গতানুগতিক এ নিয়ম অনুসারে এবারও এডিপি কাটছাঁটের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছে কমিশন। কিন্তু চলমান এডিপিতে ১২ শতাধিক প্রকল্প থাকার পরও নতুন করে আরও প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সংশোধিত এডিপিতে শতাধিক প্রকল্প যুক্ত করার আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো যুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তদবির ও দেন-দরবার করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ২৮৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়া ৬৬২টি প্রকল্প বরাদ্দহীন ও অননুমোদিতভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এরই মধ্যে এ তালিকা থেকে ৬৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত এডিপিতে নিয়মিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বরাদ্দহীন ও অনুমোদনহীন প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি এখন নতুন করে আরও ১০০ প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ঠিক করে দেয় এডিপিতে বরাদ্দ ও অনুমোদনবিহীনভাবে (সবুজ পাতা) থাকা কোন প্রকল্পের পরিবর্তে নতুন কোন প্রকল্প যুগ করা হবে। তবে, এর বাইরেও বেশ কিছু প্রকল্প যুক্ত করার আবেদন জমা পড়েছে। যা যুক্ত করার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে জোর তদবির করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক চাপে নতুন প্রকল্প যুক্ত করার কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত সমাপ্তযোগ্য প্রকল্পগুলো টাকার সংকটে পড়ে। ফলে আবার সংশোধন করে ব্যয় বাড়াতে হয়। এতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ গচ্চা যায়।
জানা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি না থাকলেও প্রকল্প যুক্ত করার গতি থামছে না। শুধু গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকেই প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ৬৪টি প্রকল্প যুক্ত করার আবেদন পাঠানো হয়েছে। ৪২টি প্রকল্প যুক্ত করার আবেদন করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশন এডিপির বাইয়ে থাকা বরাদ্দহীন, অননুমোদিত ও নতুন আসা প্রকল্পগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে সূত্র জানায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. এমকে মুজেরী বলেন, এডিপিতে যে পরিমাণ প্রকল্প রয়েছে সেগুলোরই চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ ও অর্থ ছাড় করা সম্ভব হয় না। এজন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ না হওয়ায় এগুলোর ব্যয় বারবার বাড়ানো হয়। সংশোধিত এডিপিতে নতুন প্রকল্পের অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায় আসছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী সবাইকে খুশি রাখতে চায় সরকার। সবাইকে অল্প অল্প বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন থেকে বরাদ্দহীন ও অনুমোদিত প্রকল্পগুলো এডিপি থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো সরকারই সেটা করেনি।
এ দিকে এডিপি বাস্তবায়নের গতি না থাকা বড় আকারের বরাদ্দ কাটছাঁটের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জানুয়ারি পর্যন্ত) এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩২ শতাংশ। এরই মধ্যে বৈদেশিক অংশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশীয় অংশ থেকেও বড় আকারের অর্থ ছেঁটে ফেলা হচ্ছে বলে কমিশন সূত্র জানায়।

No comments

Powered by Blogger.