চার উপজেলার ১২শ হেক্টর জমি সেচের আওতায় by এমএ হাকাম হীরা

নালিতাবাড়ী, নকলা, হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলার মিলন মোহনার অন্তত ২০ গ্রামের বিস্তীর্ণ আবাদি জমি সেচের অভাবে এতদিন ছিল অনাবাদি। যাওবা শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে কিছু কিছু জমিতে আবাদ করা হতো তাও ছিল ব্যয়বহুল এবং অনিশ্চয়তায় ভরা। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ওইসব গ্রামের মানুষকে পিছিয়ে রেখেছিল অনেক। এখন আর সে অবস্থা নেই। ভোগাই নদীর তারাকান্দা এলাকায় রাবার বাঁধ প্রকল্প পাল্টে দিয়েছে সব দৃশ্যপট; নেই পানি সমস্যা। নেই যোগাযোগ সমস্যা। এ প্রকল্পের আওতায় নালিতাবাড়ী-নকলার ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। উপকারভোগীরা বলছেন, কৃষি অর্থনীতিতে তারাকান্দা রাবার বাঁধ প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা রাখবে। চলতি বোরো মৌসুমে নালিতাবাড়ী, নকলা ও আশপাশের এলাকার কৃষক সাশ্রয়ীমূল্যে সেচ সুবিধা ভোগ করছে। তারাকান্দা রাবার বাঁধ চালু করার ফলে ভোগাই নদী, মরাগাংসহ ছোট ছোট খালগুলো সেচের পানিতে ভরে উঠেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ এবং পাকা সড়ক হওয়াতে শত বছরের বেশি সময় ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। এতে এ রাবার বাঁধ প্রকল্পটি এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভোগাই নদীতে এখন পানির অভাব নেই। উজান থেকে পানি আসছে। রাবার বাঁধের মাধ্যমে সে পানি ধরে রাখা হয়েছে। আবার রাবার বাঁধের জমাকৃত পানি জলপ্রপাতের মতো গড়িয়ে পড়ছে ভাটিতে। সে পানিও ব্যবহার করছে ভাটি এলাকার মানুষ। এলএলপি পাম্প বসিয়ে দু’তীরের কৃষক মনের আনন্দে বোরোসহ শাক সবজির আবাদ করছেন। কৃষক বলছেন, পানিতে যেমন ভরে উঠেছে নদী, তেমনি ব্রিজ ও সড়ক নির্মাণ হওয়ায় কষ্টলাঘব হয়েছে যোগাযোগে। এতে কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম মিলছে। পরিবর্তন ঘটেছে জীবনযাত্রায়।
তারাকান্দা রাবার বাঁধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল হাকিম মাস্টার বলেন, এ রাবার বাঁধটি তারাকান্দায় হওয়ায় তারা আনন্দিত। এর ফলে কৃষক দারুণভাবে উপকৃত হচ্ছে। সব ধরনের ফসল উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। একইভাবে একাধিক কৃষক বলেন, এ রাবার বাঁধটির ফলে তাদের ফসল উৎপাদন ব্যয় কমবে। হালুয়াঘাট চক মোকামিয়া এলাকার বাসিন্দা আহমেদ আলী জানান, রাবার বাঁধের সঙ্গে ব্রিজ এবং পাকা সড়ক নির্মিত হওয়ায় তাদের শত বছরের দুর্ভোগের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, এ রাবার বাঁধ-কাম-ব্রিজ এবং পাকা সড়কের কারণে আমরা এখন ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি। দু’গঙ্গাপাড়ের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার যে কৃষিবান্ধব তার বড় প্রমাণ এ রাবার বাঁধ। তিনি বলেন, সবকিছু এখন স্বপ্নের মতো মনে হয়। রাবার বাঁধ, ব্রিজ, পাকা সড়ক হওয়াতে আমরা যে কত আরামে আছি, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি। আমাদের চারটি স্লুইসগেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ রাবার বাঁধের ফলে ভূউপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে। এর ফলে ৭ হাজার মেট্রিক টন ধানসহ অন্যান্য অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে। শেরপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ১৯৯৭ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলার জামিরাকান্দা এলাকায় ভোগাই নদীর ওপর প্রথম রাবার বাঁধের সফলতার পর ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় এ রাবার বাঁধ স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এর বাস্তবায়ন করে।

No comments

Powered by Blogger.