সরকারি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বাতিল হচ্ছে মাঠ প্রশাসনে চরম স্থবিরতা by দীন ইসলাম

টানা অবরোধে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি মিটিং হচ্ছে না। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য আয়োজিত মিটিংগুলো বাতিল করতে হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, হরতাল- অবরোধে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ কারণে ঢাকায় কোন সভা করা যাচ্ছে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনাররা প্রতি মাসেই ‘মাসিক সমন্বয় সভা’য় অংশ নিতে ঢাকায় আসেন। এ সময় তারা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকেন। এবারের মাসিক সমন্বয় সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় সভাটি বাধ্য হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নোটিশে বলা হয়েছে, ভিডিও কনফারেন্সে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের  অগ্রগতি পর্যালোচনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযান পর্যালোচনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় বিচারাধীন মামলা পর্যালোচনা এবং অনিষ্পন্ন বিষয়াদি পর্যালোচনা করা হবে। এরপর বেলা ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়াদি, ১১টা ৫০ থেকে ১২টা ৩৫ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়াদি এবং ১২টা ৩৫ থেকে ১টা ২০ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে। সংশ্লিস্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সভায় মাঝে মধ্যেই ডিসিদের উপস্থিত থাকতে হয়। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই সব মিটিংয়ে ডিসিদের উপস্থিতি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এদিকে অবরোধ ও হরতালে সার ও জ্বালানি তেল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মাঠ প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সময়মতো পাওয়া না যাওয়ায় এ কাজে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, কৃষি সচিব, শিল্প সচিব ও বিসিআইসি’র চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলার বাঘাবাড়ী ও পাবনা জেলার নগরবাড়ী থেকে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার টন সার ও ৩০-৪০ লাখ লিটার জ্বালানি তেল রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে উল্লাপাড়া, শাহাজাদপুর ও বেড়া থানা পুলিশের একটি করে পিকআপ ভ্যানের সহায়তায় এসব ট্রাক/ট্যাংকলরি গন্তব্যে পৌঁছানো হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রটোকল, হাইওয়ে নিরাপত্তা বা জরুরি মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কর্তৃক পিকআপ ভ্যানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ কারণে সার/জ্বালানি  তেল গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে কালক্ষেপণ হয়। অথচ নির্বিঘ্ন চাষাবাদের জন্য সার/জ্বালানি তেল যথাসময়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রাক/ট্যাংলরিগুলো নিরাপত্তা সহকারে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য পুলিশ/বিজিবি সদস্যদের ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রত্যেক থানার জন্য আরও দুইটি করে পিকআপ ভ্যান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয় বা শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরবরাহ করা গেলে তা এ বিভাগসহ রংপুর বিভাগের সকল জেলায় নিরবচ্ছিন্ন সার ও জ্বালানি তেল পরিবহনে যথেষ্ট সহায়ক হবে। এ কারণে বাঘাবাড়ী ও নগরবাড়ী থেকে নিরাপদে নিরবচ্ছিন্নভাবে সার ও জ্বালানি তেল রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সকল জেলায় পরিবহনের লক্ষ্যে পুলিশ/বিজিবি’র ব্যবহারের জন্য তিনটি থানার জন্য ছয়টি পিকআপ ভ্যান সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হলো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিআইপি প্রটোকল, সার ও জ্বালানি তেল সরবরাহ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সময় পার করতে হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী সভায় ঢাকায় উপস্থিত থাকতে পারছেন না মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.