অগ্নিকাণ্ডে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু

সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুক্রবার এক অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণকারী ১০ জনের মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশী রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আহতদের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশী শ্রমিকের নাম। আমিরাতের শিল্পনগরী মোসাফফাহ্তে ঘটেছে এ ঘটনা। অগ্নিকাণ্ডে ভারত ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা হতাহত হয়েছেন, যা সত্যিই দুঃখজনক। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালের মে মাসে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক ফার্নিচার কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ বাংলাদেশীসহ অন্তত ১১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ছয় বাংলাদেশী শ্রমিক। এর আগে বাহরাইনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ১৩ শ্রমিক। এছাড়া আমিরাতের দুবাইয়ে ২০১০ সালে অগ্নিকাণ্ডে ৪ বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হন। দেখা যাচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা প্রাণ হারাচ্ছেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
প্রবাসে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তারা জমিজমা বিক্রি কিংবা ধারদেনা করে বিদেশে পাড়ি জমায়। এ অবস্থায় দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে তার পরিবার নিতান্তই অসহায় বোধ করে। মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা লাশ আসার অপেক্ষায় প্রহর গোনা শুরু করে। লাশ পাওয়ার পর দাফন শেষে তারা প্রতীক্ষা করে- কখন ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া যাবে। দুঃখজনক হল, অধিকাংশ নিহতের পরিবারেরই ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা পূরণ হয় না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোর আরও তৎপর হওয়া উচিত। তবে অনেক সময় এক কোম্পানি থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় অবৈধভাবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আগের কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয় না। এ জটিলতা এড়াতে হলে অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া রোধে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির পরেই প্রবাসী আয়ের স্থান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক বিদেশগামী ও তাদের পরিবার প্রতারণা-হয়রানি কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার প্রত্যেক শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করাসহ নিহতদের পরিবারের কল্যাণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.