'চাকরি করব না, চাকরি দেব' by প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ

দ্ধটা শুরু হয়েছিল তার বাবার বাড়ি থেকে। বাবার মৃত্যুর পর ৯ জনের সংসারের হাল ধরতে কাজ শুরু করেন। তখন তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্রী। লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে হাঁস-মুরগি লালন পালন দিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। এসএসসি পাস করেন। তার পর কিছু গহনা বিক্রি করে কলেজে ভর্তি হন এবং এইচএসসি পাস করেন। গহনা বিক্রির বাকি টাকা দিয়ে হস্তশিল্পের কিছু জিনিস ও একটি সেলাই মেশিন কেনেন। ৪ জন নারীকে নিয়ে জিনিস তৈরি করে শহরের দোকানে দোকানে বিক্রি করা শুরু করেন। জীবন সংগ্রামের পথে পা রাখা সেই নারী অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পেলেন স্বীকৃতি। হ্যাঁ , তিনি রোকসানা চৌধুরী। ২০১৪ সালে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ে এবং মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে সম্মাননা সনদ ও ক্রেস্ট পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বর্তমানে সিলেটে বিভাগীয় পর্যায়েও তিনি অংশ নিচ্ছেন। ১৯৯৭ সালে বিয়ে করার পর থেকেই তার পরিশ্রম বেড়ে যায়। কারণ স্বামীর অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তাই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে দিন রাত পরিশ্রম করতে হয় তাকে। ১৯৯৮ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। একজন দক্ষ কারিগর হিসেবে তিনি মৌলভীবাজারে ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে একটি দর্জির দোকান খোলেন। এতে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। সামাজিক, অর্থনৈতিক সব বাধা পেরিয়ে শক্ত হাতে ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। খাবারের জন্য একদিন কষ্ট করতে হয়েছে যাকে, আজ ১৫-২০ জনের খাবারের ব্যবস্থা তিনি নিজেই করতে পারছেন। এটা তার অনেক বড় সাফল্য বলে মনে করেন তিনি। মৌলভীবাজার জেলা শহরের আহমদ ম্যানশনে তার প্রতিষ্ঠান 'হৃদয় লেডিস টেইলার্স :ফ্যাশন অ্যান্ড বুটিক হাউস' প্রায় ১৪ বছর ধরে ভালো চলছে। মার্কেটগুলোতেও স্থান পায় তার হাতে তৈরি বুটিকের পণ্য। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন অনেক নারী। বিধবা, গৃহিণী, স্টু্কল-কলেজের ছাত্রীসহ নারীরা মাসে দেড় থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন এখানে কাজ করে। রোকসানাকে দেখে এখন উপজেলার অন্য নারীরাও স্বাবলম্বী হওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছেন। বর্তমানে 'জননী ফার্নিচার' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। মূলত এটি আরএফএল ব্র্যান্ডের রিগ্যাল ফার্নিচার বিক্রয় ও বিপণন কেন্দ্র। বর্তমানে ২৫ জন লোকের কর্মসংস্থান করেছেন তিনি। 'চাকরি করব না চাকরি দেব'_ এই মন্ত্রে মানুষকে দীক্ষিত করার কাজ করছেন এখন। কষ্টের উপার্জিত টাকা দিয়ে একটি বাংলো বাড়ি তৈরি করেছেন , যার বর্তমান মূল্য ৫০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি ৩০ শতক জমি ক্রয় করে তার পর বৃক্ষরোপণ করে বাগান তৈরি করেছেন, যার বাজারমূল্য ১৫ লাখ টাকা। তা ছাড়াও ২টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমাণ (জামানতের টাকাসহ) ২০ লাখ টাকা। রোকসানা চৌধুরী মনে করেন, পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিশ্রমের মাধ্যমে অবশ্যই সফলতা আসে। তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দিলে তিনি মৌলভীবাজারের সব উপজেলায় প্রতিষ্ঠান করতে পারবেন বলে জানান। এর মাধ্যমে অনেক নারীর কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন। সফল নারী উদ্যোক্তা রোকসানা চৌধুরী আরও বলেন, সহজ শর্তে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ বা সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমার মতো অনেকেই সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তার ব্যবসার পরিধি বিস্তৃত করতে চান। রোকসানা চৌধুরীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি জানান, ভবিষ্যতে তিনি নিজ এলাকা কমলগঞ্জে একটি বৃদ্ধাশ্রম করতে চান।

No comments

Powered by Blogger.