আবুধাবিতে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু- ছুটি থেকে শেষ ছুটিতে তাঁরা by সুজন ঘোষ ও এস এম আক্কাছ উদ্দিন

একমাত্র সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আবদুল শুক্কুরের স্ত্রী পপি আক্তার
নিহত সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী সাকেরা আক্তারের আহাজারি
১৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী স্বামী আবদুল শুক্কুরের (৩৮) ফোন পেলেন পপি আক্তার। জানালেন, বাড়ি আসছেন তিনি। পাঁচ বছর পর দেশে আসছেন স্বামী—এই আনন্দে আত্মহারা পপি।
২০ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আরেকটি ফোন পেলেন পপি। তাঁকে জানানো হলো জীবনের চরম দুঃসংবাদটি। আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তাঁর স্বামী।
আনন্দসংবাদ পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই শোকের সাগরে ভাসলেন পপি।
গত শুক্রবার ভোররাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আগুন লেগে ১০ জন মারা যান। এ ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিখোঁজ আছেন। তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবদুল শুক্কুর ও সেলিম উদ্দিন এবং রাউজানের এনামুল হক। এই তিনজনই মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
চট্টগ্রাম জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আবুধাবির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিন বাংলাদেশি নিখোঁজ আছেন। দূতাবাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে নিখোঁজ তিন বাংলাদেশিও থাকতে পারেন। তবে ডিএনএ পরীক্ষার পর এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গতকাল শনিবার ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌর এলাকায় আবদুল শুক্কুর ও সেলিম উদ্দিনের (৩৫) গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
পৌরসভার সুয়াবিল এলাকার আলমের ঘোনায় শুক্কুরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় সেখানে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছে স্বজনদের কান্নার শব্দ। ছয় বছর বয়সী একমাত্র ছেলে তানভীর ওয়াসফিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন পপি আক্তার। আহাজারি করতে করতে তিনি জানান, দুই বছর ধরে দেশে আসার চেষ্টা করছিলেন শুক্কুর। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় আসতে পারেননি। গত শুক্রবার ফোন করে জানান তিনি ছুটি পেয়েছেন, ২ মার্চ দেশে ফিরবেন। এ জন্য টাকা ধার করে টিকিটও কেটেছেন।
আবদুল শুক্কুরের শ্যালক আকবর শাহ বলেন, তিন লাখ টাকা ধার করে আবুধাবি যান তিনি। সেখানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এখনো ধারের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি।
আহাজারি চলছে দৌলতপুরের সেলিম উদ্দিনের (৩৫) বাড়িতেও। সেলিমের পরিবার জানায়, তিনি সেখানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আগামী ১ মার্চ তাঁর ছুটিতে দেশে ফেরার কথা ছিল।
সেলিমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, দুই সন্তানকে নিয়ে একটু পর পর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তাঁর স্ত্রী সাকেরা আক্তার। তিনি জানান, তাঁর ছোট বোনের স্বামী নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছেন। বাবা হারিয়ে নির্বাক দুই শিশু সায়মুন হোসেন ও আরমান হোসেন।

No comments

Powered by Blogger.