মানুষ পুড়িয়ে কি আন্দোলন হবে? by নুরুল ইসলাম বিএসসি

আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালে দগ্ধ মানুষ ও স্বজনদের কান্নায় নিজেও কেঁদেছেন। তিনি নিজে শুধু কাঁদেননি, টেলিভিশন যারা দেখছিল তাদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। এটা কোন সমাজ? এরা কোন অর্থে মানুষ? মানুষ হয়ে মানুষ পোড়ানো জন্তু-জানোয়ারের কাজ ছাড়া আর কী হতে পারে! বেগম জিয়া কি এই ক্রন্দনরত মানুষের আর্তনাদ শোনেন না? তবু কেন এই জেদাজেদি, তবু কেন হরতাল-অবরোধ? ক্ষমতা কি এতই বড় হয়ে গেল যে, হাজার মানুষ পুড়িয়ে হলেও ক্ষমতায় যেতে হবে? এই ক্ষমতা দিয়ে তিনি কী করবেন? অর্থনীতির চাকা যে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে, এটাকে রিপেয়ার করবেন কীভাবে, কোন জাদুর বলে? ক্ষমতা কারও জন্য চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতা আসবে, যাবে। কিন্তু মরা মানুষ কি আর প্রাণ ফিরে পাবে? যারা মরে গেল, তাদের সংসার, মা-বাবা, সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ কী? যারা শিশু, তারা কি বড় হয়ে একদিন বলবে না, বেগম জিয়ার হরতাল-অবরোধের সময় এদের পিতা-মাতা মারা গেছেন? এ অরাজক অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি কি নেই? মানুষ নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে না। ড্রাইভার নির্ভয়ে গাড়ি চালাতে পারে না। লাশ হয়ে যে কোনো সময় ঘরে ফিরবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। এর নাম কি স্বাধীনতা? পাকিস্তান আমলেও এরকম জঘন্য কর্মকাণ্ড আমরা দেখিনি। ব্রিটিশ শাসনের কথা শুনেছি, কিন্তু ব্রিটিশরাও এমনটা করেনি।
শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, তিনি সন্ত্রাসের কাছে মাথানত করবেন না। যথাযথই এ কথা। যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, এ দেশ মুক্ত হতে যারা বাধা সৃষ্টি করেছিল, তারাই এখন পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করছে। কিন্তু ’৭১ সালে পারেনি, এখনও পারবে না।
শেখ হাসিনাই এ দেশের শেষ ভরসাস্থল। তাকে যে কোনো মূল্যে টিকিয়ে রাখতে হবে। নতুবা এ দেশের ভাগ্যে কী লেখা আছে, একমাত্র অন্তর্যামী ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।
যার যখন ইচ্ছা হরতাল-অবরোধ করছে। গাড়ি চলে, সবকিছু নরমাল, ঢাকা শহরে প্রতিটি রাস্তায় যানজট লেগে থাকে, তারপরও লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে এরা হরতাল-অবরোধ করছে! হরতালে কোনো সাড়া নেই। ওদের ইচ্ছা হরতাল দেখিয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যেন বিশ্ব সংস্থার কোনো লোক এসে মধ্যস্থতা করেন। তারানকোকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তিনি এর আগেও চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তা কোনো ফল বয়ে আনেনি। এখনও যে ফল বয়ে আনবে তার বিশ্বাস কী? প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন- যারা খুনি, যারা মানুষ জ্বালিয়ে মারে, তাদের সঙ্গে কোনো কথা নয়।
এখন কথা হল, এর শেষ কোথায়? আরম্ভ যেমন সুবিধার হয়নি, শেষটাও সুবিধার হবে বলে মনে হয় না। এমনিতে প্রাথমিক অবস্থা থেকে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। জামায়াত-বিএনপির কর্মী গ্রেফতার হওয়াতে আন্দোলনের জোর কমে গেছে। আরও কিছু ধরতে পারলে একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বিএনপির আন্দোলন মাঠে মারা যাবে।
আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, লক্ষ্যহীন আন্দোলন সফলতার মুখ দেখে না। বিএনপির আন্দোলনের লক্ষ্য কী আমরা জানি না। ক্ষমতা দখল যদি আন্দোলনের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : রাজনীতিক ও কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.