কোকোর জানাজা ছিল নীরব প্রতিবাদ by ইকতেদার আহমেদ

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়-পরবর্তী ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৬ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ অবধি আলোচনা হয়। আলোচনা ব্যর্থ হলে ২৫ মার্চ রাতে সেনাবাহিনী বাঙালিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। এরপর মেজর জিয়াউর রহমান ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বলিষ্ঠ কণ্ঠের ঘোষণাটি সে দিন সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল এবং সাথে সাথে মেজর জিয়া নামটি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান ১১টি সেক্টরের একটির নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং যুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু তাকে ‘বীর উত্তম’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত করেন। তিনি নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে যখন অশেষ অবদান রাখছিলেন তখন ব্রিগেডিয়ার ছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট দু’কন্যা ব্যতীত মর্মান্তিকভাবে সপরিবারে এক সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন। সেনাবাহিনীর পাল্টা-অভ্যুত্থানে মোশতাক তিন মাসের মাথায় ক্ষমতাচ্যুত হলে বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে আকস্মিকভাবে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসীন হন। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তিনি সচেষ্ট হন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করে সফলতা পান এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন। তার দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়।
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে মনোনিবেশ করেন। তার খাল খনন কর্মসূচি গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে সামরিক শাসক জিয়া জনমানুষের নেতায় পরিণত হন। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার আগে ও পরক্ষণে সেনাবাহিনীর আদেশের শৃঙ্খল (Chain of Command) ভেঙে পড়েছিল এবং এর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তাকে কঠোর হতে হয়েছিল। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি হিসেবে চট্টগ্রাম সফরকালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য দ্বারা তিনি নিহত হন। জিয়াউর রহমানের লাশ ঢাকায় নিয়ে এসে নামাজে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। মানিক মিয়া এভিনিউতে জিয়ার যে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা আমাদের দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের বৃহত্তম ছিল। এতে সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল এবং তখন অনেককে অঝোরে কাঁদতে এবং তার নাম ধরে আহাজারি করতে দেখা গিয়েছিল। এর আগে ১৯৬২, ৬৩ ও ৬৪ খ্রিষ্টাব্দে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় পল্টন ময়দানে। এ তিন জাতীয় নেতার নামাজে জানাজায় ব্যাপক জনসমাগম হলেও তা জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজার মতো বিশাল হয়নি। মুসলমানদের মধ্যে একটি ধর্মবিশ্বাস কাজ করে যে, একজন মৃত ব্যক্তির নামাজে জানাজায় উপস্থিতি যত ব্যাপক হয় আল্লাহর কাছে তার গোনাহ মাফ তত সহজ হয়।
জিয়া মৃত্যুকালে স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দুই সন্তান তারেক ও কোকোকে রেখে যান। তখন কনিষ্ঠ ছেলে কোকোর বয়স ছিল ১২ বছর। পিতৃহারা এ দুই ছেলেকে বেগম জিয়া বুকে আগলে যখন মানুষ করছিলেন তখন তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি জিয়ার রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাকে রাজনীতির মাঠে পদার্পণ করতে হবে। কিন্তু পরবর্তীকালে দলের হাল ধরেছিলেন এবং তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে এরশাদের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে এবং দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। এর আগে দীর্ঘ ৯ বছরের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তার অবস্থান অনড় ও কঠোর হওয়ায় তা তাকে আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা এনে দেয়।
সপ্তম সংসদের মেয়াদ অবসানের পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন বিষয়ে জটিলতা দেখা দিলে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবির্ভাব ঘটে। সে সরকার প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের প্রতি কঠোর পরিলক্ষিত হলেও পরে দেখা যায় এ কঠোরতা বিএনপির ক্ষেত্রে অধিক প্রযোজ্য। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করে। তবে খালেদা জিয়ার সাথে তার দুই ছেলে তারেক ও কোকোকেও কারান্তরীণ করা হয়। বন্দী থাকাবস্থায় তারেক ও কোকো উভয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগৃহীত হন। এতে উভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে তারেককে সপরিবারে লন্ডন এবং কোকোকে সপরিবারে ব্যাংকক পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারেক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কোকো কখনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হননি। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনা এবং তারেক কোকোসহ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়েছিল! নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে নিজেদের নেত্রীর বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা অচল হয়ে পড়ে; অপর দিকে তারেক-কোকোসহ বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা সচল থাকে। এরূপ একটি মামলায় আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোকোর ছয় বছরের সাজা হয়। এ সাজা নিয়েই তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাস করতে থাকেন। গত ৩ জানুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
এ অবস্থায় ২৪ জানুয়ারি আকস্মিকভাবে খবর আসে যে, কোকো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে ইন্তেকাল করেছেন। খবরটি বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় থেকে বিকেল ৪টা নাগাদ ঘোষণা করা হয়। সংবাদটি মুহূর্তের মধ্যে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ ব্যথিত ও মর্মাহত হয়। কোকোর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৫ বছর এবং তিনি স্ত্রী ও দু’কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
দীর্ঘ প্রায় সাত বছর প্রবাসে অবস্থানরত ছেলের বিয়োগব্যথায় বেগম খালেদা জিয়া একেবারেই ভেঙে পড়েন। তার মানসিক কষ্ট লাঘবে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এমন সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুত্রশোকে বিহ্বল বেগম জিয়াকে সমবেদনা জানানোর জন্য আসার কথা বলা হলে তার বিশেষ সহকারীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়ায় পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোর দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তার গাড়িবহরসমেত দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় সম্মুখে উপস্থিত হন। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এব্যাপারে বলা হয়েছে, সে সময় তার কার্যালয়ের মূল ফটক ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল এবং যদিও ভেতরে দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা অবস্থান করছিলেন তারা কেউ নিচে এসে ফটক খোলার ব্যবস্থা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সৌজন্য প্রদর্শন করেননি। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগেই সেখানে এসএসএফ ও পিজিআরের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। পুত্রশোকে কাতর একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোর উদ্যোগটিকে দেশবাসী ইতিবাচক হিসেবে দেখছিলেন। তবে এর পূর্বক্ষণেই দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দু’টি প্রকল্প উদ্বোধনকালে ‘বেগম জিয়া সন্ত্রাসের মাধ্যমে পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যা করছেন’ মর্মে উল্লেখ করেন। সে দিন এবং পরদিন পেট্রলবোমা নিক্ষেপের হুকুমদাতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখপূর্বক দু’টি মামলা করা হয়। একাধিক মন্ত্রীর মুখে ঘোষণা করা হয়, যেখানে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটবে সেখানে হুকুমের আসামি হিসেবে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একজন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়, কাশিমপুর কারাগার বেগম খালেদা জিয়ার জন্য খালি করে রাখা হয়েছে। এ সময়, এর অব্যবহিত পর ও পূর্বক্ষণে সংসদে খালেদা জিয়ার অতীত টেনে এনে তার ব্যাপারে ব্যাপক অসৌজন্যমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা জানানোকে প্রশংসার চোখে দেখলেও একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্রশোকের সময় এবং তার লাশ দাফনের আগমুহূর্তে তার বিষয়ে বিষোদগারকে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেননি।
মৃত্যুর পরদিন কুয়ালালামপুরের মসজিদে নিগারায় কোকোর যে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে নামাজে প্রবাসী বাঙালিদের বিপুল সমাবেশ ঘটেছিল। জানাজায় সমবেত বাঙালিদের আল্লাহু আকবার ধ্বনি মসজিদ ও বাইরে উপস্থিত প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল। লাশ ২৭ জানুয়ারি দেশে আসার পর বিমানবন্দর থেকে লাশবাহী গাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে আসতে দু’ঘণ্টার অধিক সময় লাগে। গাড়িটি যখন বিমানবন্দর সড়ক অতিক্রম করছিল তখন দেখা গেছে রাস্তার দু’ধারে মানুষ গভীর শোক ও মর্মবেদনাসহ সহানুভূতি প্রকাশ করছেন এবং আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিচ্ছেন। কোকোর লাশ গুলশানের কার্যালয়ে পৌঁছার পর বেগম খালেদা জিয়াকে দেখানোর জন্য নেয়া হলে যে হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের প্রকাশ ঘটে, তা মিডিয়ার সুবাদে দেশবাসী দেখার পর তারাও শোকাহত হন। সে দিনে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি দেখে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তার শারীরিক অবস্থা এতই নাজুক ছিল যে, তা প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য কারো সমবেদনা গ্রহণের মতো সহায়ক ছিল না। কোকোর লাশবাহী গাড়িটি বায়তুল মোকাররম মসজিদ অভিমুখে নেয়ার সময় সড়কের উভয় পাশে জনসাধারণের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। নামাজে জানাজায় বায়তুল মোকাররমে যে জনসমাগম হয়েছিল, সে ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত থেকে জানা যায়, তার বাবা জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজায় জনসমাগমকে তা ছাড়িয়ে গিয়েছিল এবং তাদের ভাষ্যমতে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম নামাজে জানাজা। এতে উপস্থিত মানুষের মুখে নামাজ পড়ার আগে ও পরে উচ্চৈঃস্বরে আল্লাহু আকবার ধ্বনি শুনে দেশবাসী বিমোহিত হয়েছিল। কোকোর লাশ বায়তুল মোকাররম থেকে বনানী কবরস্থানে নেয়ার সময়েও জনতার উপস্থিতিতে ভাটা দেখা যায়নি এবং এ কারণে লাশটি কবরস্থানে পৌঁছাতে এক ঘণ্টার অধিক সময় লাগে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে এবং বিদেশেও বিভিন্ন শহরে গায়েবানা নামাজে জানাজায় জনসাধারণের ব্যাপক উপস্থিতি তার প্রতি মানুষের ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
কোকো সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ ছেলে এ ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে। একাধিক উচ্চপদস্থ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সেনাবাহিনীর বনানীর কবরস্থানে দাফন বিষয়ে যে বিধান রয়েছে, তাতে সাবেক সেনাকর্মকর্তার সন্তান হিসেবে কোকোর লাশ সেখানে দাফনের বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে সেনা কবরস্থানে দাফনের আগ্রহ ব্যক্ত করা হলেও কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমতি প্রদানে ‘অপারগতা’ দেখায়।
গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি পল্টনের কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার অনুমতি চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, নাশকতার আশঙ্কায় অনুমতি দেয়া হয়নি। কোকোর নামাজে জানাজার পূর্বক্ষণে সরকারি দলের একজন সাবেক মন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন নামাজে জানাজায় কোনো ধরনের নাশকতা করার চেষ্টা করা হলে বরদাস্ত করা হবে না। নামাজে জানাজার এই বিপুল জন-উপস্থিতি সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণভাবে হওয়ায় এবং লাশবাহী গাড়িটির আগমন-প্রস্থান ও সামগ্রিকভাবে দাফন শৃঙ্খলার সাথে সমাপ্ত হওয়ায় ৫ তারিখ বিএনপিকে জনসভা করতে দেয়া হলে নাশকতার আশঙ্কা ছিল, এমন ধারণা কি  অমূলক প্রতীয়মান হয় না?
কোকোর অকালমৃত্যু কাক্সিত ছিল না। কিন্তু আল্লাহ পাকের ইচ্ছার কাছে মানুষের করণীয় কিছু থাকে না। কোকোর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় অনেকে বলার চেষ্টা করেছেনÑ যে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার প্রতি কেন সমবেদনা? অপরাধ ও সাজা বিষয়ে একজন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, তা হলো কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার অপরাধ ও সাজার মৃত্যু হয়। তাই একজন মৃত ব্যক্তি অপরাধী নাকি সাজাপ্রাপ্ত এ ধরনের বাক্যবাণ বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়।
কোকোর অকালে মৃত্যুর কারণে পুত্রশোকে বিহ্বল বেগম জিয়ার প্রতি দেশবাসীর যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা রয়েছে তার প্রমাণ নামাজে জানাজায় ব্যাপক উপস্থিতি। সে দিন মানুষ নামাজে জানাজায় নীরব প্রতিবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এটা কী বার্তা বহন করে তা যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝেছেন আর যারা বোঝেননি, তারা বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ।
সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটি সৃষ্টির অমোঘ নিয়ম। জানা যায়, কোকো বিনয়ী ও মার্জিত ছিল। পিতা ও স্বামী হিসেবেও তাকে সবাই আদর্শ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বন্ধুমহলেও সবাই তাকে আন্তরিক ও অমায়িক হিসেবে পেয়েছেন। প্রায় সাত বছর অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রবাসে অবস্থানের কারণে নিজের মা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তার যদি অকাল মৃত্যু হয় তা বেশি শোকাবহ।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.