কার্যালয় ঘিরে কড়াকড়ি নালিশি মামলা

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে ফের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারির কারণে গতকাল বিএনপি নেতাকর্মীদের কেউ যাননি দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে ওই কার্যালয়ে এদিন কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দেয়া হয়নি। সংবাদ কর্মীরাও সেখানে প্রবেশের সুযোগ পাননি। শনিবার সকালে টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী। গতকাল থেকে কড়াকড়ি আরোপ করায় নেতাকর্মীদের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। এদিকে খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা করা হয়েছে আদালতে। তার বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধে মানুষ হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদসহ বিএনপি’র দুই নেতাকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
কার্যালয় ঘিরে কড়াকড়ি
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে থেকে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে আশপাশের গলিতে। কার্যালয়ের পকেট গেটটিও খুলে রাখা হয়েছে। কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে কাউকে আসা-যাওয়া করতে দেয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকদেরও চেয়ারপারসন কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সকালে কার্যালয়ের গেট থেকে মাজহারুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি একটি সিটিসেল মোবাইল সেট ও কিছু তার নিয়ে গিয়েছিলেন কার্যালয়ে। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ কয়েকজনকে। এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। পুলিশের কড়াকড়ির কারণে গতকাল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাননি কেউ। ৩রা জানুয়ারি রাতে কার্যালয়ের সামনে ও দুইপাশে ব্যারিকেড দিয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে পুলিশ। পরে ১৮ই জানুয়ারি মধ্যরাতে ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়। তারপর নেতাকর্মীরাও সেখানে আসা-যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সর্বশেষ ৩০শে জানুয়ারি মধ্যরাতে কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-টেলিফোন-ক্যাবল টিভি-ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সবশেষ রোববার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার উপদেষ্টা  মোসাদ্দেক আলী দেখা করে বের হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। এছাড়া রোববার রাতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিচারপতি আবদুর রউফসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক, সাংবাদিক নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও পুলিশ কাউকে বাধা  দেয়নি।
নালিশি মামলা: অবরোধ ও হরতাল দিয়ে ৪২ জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে বিএনপি  চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ঢাকার আদালতে। আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। গতকাল সকাল ১০টার দিকে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে মামলাটি করেন।  সকাল ১১টায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুর রহমান আদেশ দেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, চলমান অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় হতাহতের সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত ৫ই জানুয়ারি থেকে সিলেট, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু এবং সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এসব হতাহতের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমদাতা উল্লেখ করে বাদী দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/১০৯/১২০-বি ধারায় বর্ণিত অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে এ মামলাটি করেন। এর আগে যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার এজাহারে খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করা হলেও তাকে আসামি করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট করেনি পুলিশ। অন্যদিকে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় কুমিল্লায় দায়ের করা একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ ও ৫ই ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের ধর্মঘট: রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত, নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে ৪ ও ৫ই ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল। ওই দুই দিনের মধ্যে দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ছাত্র ধর্মঘট চলার আলটিমেটাম দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী সরকারের পাঁচ বছর ও ৫ই জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনে গঠিত অবৈধ সরকারের এক বছরে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেই খুন হয়েছে ৫০ জনের অধিক মেধাবী শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবিচ্ছিন্ন ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদেরকে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে যেতে চাপ প্রয়োগ করছে। তুচ্ছ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগে মেধাহীন ছাত্রলীগের ক্যাডারদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে প্রশাসন। বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রলীগের আজ্ঞাবহ এবং ছাত্রলীগের অপকর্মের দোসর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এখন ছাত্রলীগকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকত্ব না করে ছাত্রলীগের অভিভাবক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাচ্ছেন। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, অবিলম্বে এসব অপকর্ম বন্ধ করুন। আর সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কথা বিবেচনায় রেখে দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অন্যথায় ছাত্রদল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদেরকে সঙ্গে নিয়ে লাগাতার ধর্মঘট দিতে বাধ্য হবে। এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরিফ হোসেনকে হত্যা, পুলিশ কর্তৃক ঢাবি সাংবাদিককে প্রহার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেনসহ ছাত্রদল নেতাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রদল। উল্লেখ্য, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল আরিফ হোসেন। ২৯শে জানুয়ারি বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। আর গতকাল মিরপুরে তার লাশ পাওয়া গেছে। এদিকে অবরোধ ও হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে মিছিল করেছে ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হাসানুল বান্না ও আমির আমজাদ মুন্নার নেতৃত্বে শাহবাগে, বায়েজিদ আরেফিনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, এসএম কবিরের নেতৃত্বে পলাশী মোড়, নাহিদের নেতৃত্বে শান্তিনগরে এসব ঝটিকা মিছিল হয়।

No comments

Powered by Blogger.