‘পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে’ -তপন চৌধুরী

তপন চৌধুরী
চলমান রাজনৈতিক অবস্থায় শুধু ব্যবসায়ীরা না, পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি তপন চৌধুরী। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিটিএমএ কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তপন চৌধুরী। ১২ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী কাল বুধবার শুরু হচ্ছে। এ জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়েও কথা বলেন।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, ‘শুধু আমরা না, পুরো দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্যোক্তারা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছেন। বেশ কিছু ক্রেতা ইতিমধ্যে ফিরে গেছে। কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। ’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘কারখানা চলছে। তবে বন্দর থেকে কাঁচামাল আনতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া গুনতে গিয়ে প্রতিদিনই ক্ষতি বাড়ছে। এমন অবস্থায় ক্রেতারা উল্টো দাম কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা বলছে, “এই পরিস্থিতির মধ্যেও তোমাদের আমরা ক্রয়াদেশ দিচ্ছি। ” ভাষাটা এমন যে, ক্রেতারা আমাদের দয়া করছে। ’
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভারত, চীন বা ভিয়েতনামের জন্য আলাদা কোন ভালোবাসা নাই। তারা যে দেশ থেকে কম দাম ও দ্রুত পণ্য সরবরাহ পাবে, সেখানেই কাজ দেবে। আমরা ক্রেতাদের এসব চাহিদা পূরণ করতে পেরেছি বলেই আজকের এই অবস্থান পৌঁছেছি। তাই কীভাবে আমরা বলি, সবকিছু সুন্দর চলছে। ক্রেতারা যাবে না। ’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থা যত দীর্ঘায়িত হবে, ক্ষয়ক্ষতি তত বাড়বে।
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সহায়তা চাইবেন কি না, জানতে চাইলে তপন চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষতি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়তই কথা হচ্ছে। আমাদেরও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ থাকতে হয়। আমরা তো সরকারকে বলতেই পারি, তবে সরকারই বা কোথা থেকে দেবে। আমাদের ইনকামের টাকাই তো রাজস্ব খাতে যায়। সরকার তো আর টাকা ছাপায় না যে, চাইলাম আর দিয়ে দিল। ’
বিটিএমএর সভাপতি বলেন, ‘আজ আমরাই যখন ক্ষতিগ্রস্ত, পুরো শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত, তখন সরকারের হাত কীভাবে শক্তিশালী হবে? সরকার তো আকাশ থেকে টাকা এনে দেবে না। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সরকার অর্থনীতিকে সচল রাখতে সাধ্যমতো সহায়তা করবে। ’
বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, গত বছর প্রাইমারি টেক্সটাইল বা বস্ত্র খাতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। এটি তার আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অবকাঠামো, গ্যাস ও বিদ্যুৎ চাহিদামতো পাওয়া গেলে ২০২১ সালের মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএর সহসভাপতি ফজলুল হক, শওকত আজিজ ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, পরিচালক আবদুল মান্নান মিয়া, চ্যান চাওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাইগার লিন প্রমুখ।
পোশাক খাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু কাল
আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশের উদ্যোক্তাদের পরিচয় ঘটানো ও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে ১২ তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী কাল বুধবার শুরু হচ্ছে। বিটিএমএর সঙ্গে তাইওয়ানের চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনাল ও হংকংয়ের ইর্য়োকার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কোম্পানি যৌথভাবে চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিটিজি নামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এবারের প্রদর্শনীতে ৩৩ দেশের ৮৮০ টি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ১৬ টি হলে এসব প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৬০ টি বুথ থাকবে। প্রদর্শনীর এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে ১২ টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হবে। শনিবার পর্যন্ত প্রদর্শনী প্রতিদিন দুপুর ১২ টা রাত ৮ টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, প্রদর্শনীর মাধ্যমে বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং টেস্টিং, ওয়াশিং, এমব্রয়ডারি, সেলাইয়ে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। প্রয়োজনে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কিনতেও পারবেন। গত বছর ডিটিজিতে ২০ কোটি ডলারে যন্ত্রপাতি বিক্রি হয়।

No comments

Powered by Blogger.