উড়োজাহাজ জব্দ- রাঙা প্রভাতের ভেতরে ৬১ কেজি সোনা

(শাহ্‌জালাল বিমানবন্দরে আটক স্বর্ণের বার ও চেইন l ছবি: প্রথম আলো) এবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নতুন কেনা উড়োজাহাজের কাঠামোর ভেতর লুকানো অবস্থা থেকে ৬১ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। ৪১৯ আসনের নতুন প্রজন্মের এই উড়োজাহাজটির (বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর) বিমানের দেওয়া নাম হচ্ছে রাঙা প্রভাত। ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা দামের উড়োজাহাজটি শুল্ক কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সকালে দুবাই থেকে যাত্রী নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে রাঙা প্রভাত। এরপর শুল্ক গোয়েন্দারা উড়োজাহাজটির ভেতরে বিশেষভাবে রক্ষিত সোনার বার ও অলংকার উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, ৪৮৫টি সোনার বার ও ১১৪টি সোনার চেইন পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে মোট ৬১ কেজি ২০০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
মইনুল খান বলেন, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা এ অভিযান চালান। তাঁদের কাছে তথ্য ছিল, সকাল সোয়া ১০টায় উড়োজাহাজটি অবতরণ করবে। কিন্তু তা প্রায় দুই ঘণ্টা আগে আটটা ২০ মিনিটে অবতরণ করে। এ ছাড়া উড়োজাহাজটি বোর্ডিং ব্রিজের পরিবর্তে প্রকৌশল হ্যাঙ্গারের কাছাকাছি বে-তে ভেড়ানো হয়। তিনি বলেন, এসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
উদ্ধার অভিযানে ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ব্যাপক তল্লাশি চালানো পর উড়োজাহাজটির চারটি টয়লেটের আয়নার প্যানেলের স্ক্রু খোলার পর এর পেছনে বাক্সের মতো খালি জায়গায় ও বেসিনের দুই স্তর নিচে তৃতীয় স্তরে সুতা দিয়ে বেঁধে রাখা অবস্থায় এবং অক্সিজেন মুখোশ রাখার স্থানের পেছনে মোটা পাইপের প্রবেশ মুখে (মাস্ক চেম্বার) থেকে এসব সোনা উদ্ধার করা হয়।
ওই কর্মকর্তার মতে, এই ধরনের উড়োজাহাজের বিষয়ে পূর্ব প্রশিক্ষিত ও প্রকৌশল জ্ঞানসম্পন্ন বিমানকর্মীর যোগসাজশ ছাড়া এসব স্থানে সোনা রাখা এবং তা বের করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এই উড়োজাহাজটি দুদিন পর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকৌশল হ্যাঙ্গারে যাওয়ার কথা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তখন এসব সোনা বের করে বাইরে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল চোরাচালান চক্রের।
এই উদ্ধার অভিযানের খবর পেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবর রহমান শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় সন্দেহ হচ্ছে, এ ঘটনায় বিমানকর্মীদের কারও কারও সম্পৃক্ততা আছে। এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত ছিল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি বিমানের একটি উড়োজাহাজের মালামাল রাখার স্থান (কার্গো হোল) থেকে ১৪ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় দুজন বিমানকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি প্রায় দুই কোটি টাকার সোনাসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মচারী হাফিজুর রহমানকে আটক করেন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
এরও আগে গত বছরের ২৪ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের (এয়ারবাস) ভেতর থেকে লুকানো অবস্থায় ১২৪ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় এনবিআর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই বাংলাদেশ বিমানের কর্মী। এঁদের বিরুদ্ধে পরে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়েছে। অপর একটি সোনা পাচারের মামলায় বিমানের তিনজন পদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের এক হিসাবে বলা হয়, গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে তারা মোট ৬৫১ কেজি সোনা উদ্ধার ও ৭৫ জনকে আটক করেছে।

No comments

Powered by Blogger.