পাঁচ তারকা হোটেলে অতিথি কমেছে ৪০ ভাগ by সিরাজুস সালেকিন

বিরোধী জোটের টানা হরতাল ও অবরোধে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দাভাব। এর প্রভাব পড়েছে পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যবসাতেও। দেশের অস্বাভাবিক অবস্থার কারণে অতিথি পাচ্ছে না হোটেলগুলো। অগ্রিম বুকিং দিয়েও অনেক অতিথি আসছেন না। আবাসিক সার্ভিসের বাইরেও এ হোটেলগুলো হেলথ ক্লাব, বিজনেস সেন্টার, শপিং আর্কেড, সুইমিং পুল, হলরুম, রেস্টুরেন্ট ও বার সার্ভিস দিয়ে থাকে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাস থেকে সব রকম সার্ভিস কমে গেছে। কমে গেছে সভা-সেমিনার ও সামাজিক অনুষ্ঠান। রেস্টুরেন্ট ও বারগুলোতে কমেছে গ্রাহক। অতিথিদের বাইরেও পরিবার নিয়ে বিশেষ দিনগুলোতে সময় কাটাতে আসতেন অভিজাত শ্রেণীর মানুষেরা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাদের আনাগোনাও কমে গেছে। রাজধানীর প্রায় সবগুলো হোটেলেই ব্যবসা কমেছে ৪০ শতাংশ হারে। এ অবস্থায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন হোটেল মালিকরা। এর প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতে। রাজধানীর কয়েকটি ফাইভ স্টার হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান সহিংস কর্মসূচির কারণে বিদেশী অতিথিরা কেউ বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। আগের দিনগুলোতে জানুয়ারি-ফেবু্রয়ারি মাসে বিপুল পরিমাণ পর্যটক ও ব্যবসায়ী ঢাকায় আসতেন। কিন্তু বছরের শুরুতেই অস্থিরতার কারণে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মাসখানেক আগেও যারা বুকিং দিয়েছেন তারাও বুকিং ফিরিয়ে নিয়েছেন। ঢাকায় পুরানো ব্যবসায়ীরা আসছেন কম। একেবারে যারা নতুন ব্যবসা করছেন তারাই শুধু আসছেন। বিদেশী অতিথিদের গাড়ি পুলিশ পাহারায় চলাচল করলেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তারা। বিশেষ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পেট্রলবোমার বিভীষিকা প্রচার হওয়ায় বিদেশী অতিথিদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের একজন কর্মকর্তা জানান, এই হোটেলে প্রায় ২৯৫টি রুম রয়েছে। জানুয়ারি-ফেবু্রয়ারিতে তাদের রুমগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ ভাড়া অবস্থায় থাকত। কিন্তু এ বছর অর্ধেকের মতো খালি আছে। একই অবস্থা রেস্টুরেন্ট, বার ও ক্যাফে সার্ভিসেরও। ৩০-৪০ শতাংশের ওপরে ব্যবসা কমেছে। ব্যাংকুয়েট হলগুলোতে প্রতিদিন সভা-সেমিনার হতো। এখন সেগুলো নিয়মিত হচ্ছে না। সামগ্রিকভাবে এই হোটেলের ব্যবসা কমে গেছে। হোটেল ওয়েস্টিন সূত্রে জানা যায়, এই হোটেলে কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীরা বেশি আসতেন। গত জানুয়ারি মাস থেকে অতিথিদের সংখ্যা কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠান কমে গেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় জমজমাট বিয়ের অনুষ্ঠান হতো প্রতি সপ্তাহেই। এখন এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য খুব কম বুকিং হচ্ছে। রেস্টুরেন্টের ব্যবসা কমে গেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। হোটেল রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন সূত্রে জানা যায়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাদের অতিথি কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। রেস্টুরেন্ট, বার ও স্পা সার্ভিসের গ্রাহক কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। এই হোটেলে মূলত পর্যটকরা আসেন। এছাড়া বিদেশী ব্যবসায়ীদের পছন্দের তালিকায় ছিল হোটেলটি। হোটেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবরোধ ও হরতালের কারণে গত জানুয়ারি মাসে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বড় হোটেলের মালিকদের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছোট হোটেল ব্যবসায়ীরা। অনেক মালিকের পক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়বে দেশের পর্যটন শিল্পে। গত জানুয়ারি মাসে পর্যটন বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল এ মওসুমে তাদের ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.