সংঘাত-নৈরাজ্য বন্ধের আহ্বান 'নাগরিক সমাজের'

সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে দেশজুড়ে চলমান সংঘাত ও নৈরাজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
'নাগরিক সমাজের' পক্ষ থেকে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা।
তিনি বলেন, 'আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। পরে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে- এটাই আমাদের কথা।'
পরে এক প্রশ্নের জবাবে ড. হুদা বলেন, 'সংঘাত বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংলাপের উদ্যোগ সমান্তরালভাবেই এগিয়ে নিতে হবে। আন্দোলনের নামে যারা সংঘাতে জড়িয়েছেন তাদের কাছে একটি আশ্বাসও পৌঁছাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে 'নাগরিক সমাজের' পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সিএম শফি সামী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক এবং অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর।
এ সময় 'নাগরিক সমাজের' পক্ষ থেকে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কমিটির নাম কী হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
কমিটির আহ্বায়ক ড. শামসুল হুদা ১৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করে বলেন, 'এই প্রক্রিয়ায় আরও অনেককে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। কমিটি হবে ২১ সদস্যের।'
তিনি আরও জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তারা ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন। সংলাপের উদ্যোগ কোন প্রক্রিয়ায় তাও বিবদমান দু'পক্ষকেই নির্ধারণ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সন্ত্রাস বন্ধ ও আলোচনা এ দুটোই নাগরিক সমাজের মূল ভাবনা উল্লেখ করে সাবেক সিইসি বলেন, 'দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে অচলাবস্থা থেকে উত্তরণে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।'
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ড. হুদা বলেন, 'রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।' বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের কোনো সম্ভাবনা দেখা না গেলেও তারা আশাবাদী বলে জানান তিনি।
সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের পর সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সমালোচনা প্রসঙ্গে ড. হুদা বলেন, 'এ থেকে বোঝা যায় সরকার আমাদের উদ্যোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে।'
সংলাপ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুরুতে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্যদের যুক্ত থাকা প্রসঙ্গে শামসুল হুদা বলেন, '৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা ছিলাম আমন্ত্রিত অতিথি। সেখানে আয়োজকদের মধ্যে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম ও আ স ম আবদুর রবের জেএসডিসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ছিল। আমাদের বর্তমান উদ্যোগের সঙ্গে এখন যারা রয়েছেন তারা কেউ সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।'
সংকট নিরসনে জাতিসংঘসহ বিদেশিদের নানা উদ্যোগ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটা আমাদের জন্য মোটেই সম্মানজনক নয়।'
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দেওয়া চিঠির সারমর্ম তুলে ধরে শামসুল হুদা বলেন, 'সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা সীমিত হলেও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে চলমান সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির একটি নৈতিক ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি চলমান সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন বলেই নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা।'
কমিটিতে যারা আছেন
সংবাদ সম্মেলনে এটিএম শামসুল হুদাকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, এএসএম শাহজাহান, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. আকবর আলি খান, সিএম শফি সামী, রাশেদা কে চৌধুরী, রোকেয়া আফজাল রহমান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক, ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর এবং সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
কমিটির এখতিয়ার প্রসঙ্গে শামসুল হুদা জানান, সন্ত্রাস বন্ধ বা সংলাপের জন্য তারা নিজেরা কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবেন না। তারা সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিলে তারা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সাবেক এই সিইসি।

No comments

Powered by Blogger.