স্মরণ : সাংবাদিক আবদুস সালাম

আজ প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুস সালামের মৃত্যুবার্ষিকী। জন্ম ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ ধর্মপুরে ১৯১০ সালে। ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুল থেকে ১৯২৬-এ ম্যাট্রিক, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯২৮-এ আইএসসি, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩১-এ ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩২-এ ইংরেজিতে এমএ (প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান) ডিগ্রি লাভ করেন। ফেনী কলেজের লেকচারাররূপে কর্মজীবন শুরু। আয়কর বিভাগ, সিভিল সাপ্লাই দফতর ও অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস  কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৪৯-এ সরকারের উচ্চপদের চাকরি থেকে পদত্যাগ এবং ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার (১৯৪৯) পত্রিকায় যোগদান করেন। ১৯৫০-এর ৩ জুন ওই পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলার সমর্থনে ১৯৫২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান অবজারভারে জোরালো সম্পাদকীয় প্রকাশ করলে ওই দিনই পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল এবং পরদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়। মুক্তি পেয়ে তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ফেনী উত্তর আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।  সরকার অবজারভার প্রকাশের অনুমতি দিলে এর সম্পাদনায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৩-১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সংবাদপত্র-সম্পাদক পরিষদের সভাপতি। এ সময়ে ‘প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট’সহ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বিবৃতি প্রদান করেন আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ (১৭ মে, ১৯৭১)। ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের  অন্যায় হস্তক্ষেপ মেনে না নিয়ে অবজারভারের সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।  ‘দি সুপ্রিম টেস্ট’ নামে সাহসের সাথে সম্পাদকীয় লিখে মুজিব সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরায়  রোষানলে পতিত হয়েছিলেন। অতঃপর বাংলাদেশ টাইমসে নিয়মিত সম্পাদকীয় রচনা করেছেন। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রথম মহাপরিচালক। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের প্রভু নয় বন্ধু গ্রন্থে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে তিনিই প্রথম জোরালো কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৬-এ প্রবর্তিত ‘একুশে পদক’ প্রথম বছরেই লাভ করেন। মৃত্যু ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে।

No comments

Powered by Blogger.