গুলশানমুখী মিছিল ও বাড়াবাড়ি- রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ধসিয়ে দিচ্ছে

খালেদা জিয়া কার্যত বিরোধীদলীয় নেত্রী। সরকার একটি অনুগত ও নজিরবিহীন বিরোধী দল সাজিয়ে সংসদে বসালেও এই অনৈতিক কাজটি তারাও মেনে নেননি। তাই দিনমান সংসদে ও সংসদের বাইরে সরকারি দলের মন্ত্রী, নীতিনির্ধারক এবং তাদের জোটভুক্তরা সবাই খালেদা জিয়াকে টার্গেট করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনিই সরকারসৃষ্ট সব প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন। তার জীবনাচার ও রাজনীতিই শুধু সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে না, তার খাওয়াদাওয়াও এখন নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এখন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে সরবরাহের উদ্দেশ্যে আনা খাবারও কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে মন্ত্রীর নেতৃত্বে দলীয় ক্যাডাররা। কূটনৈতিক জোনে খালেদার অফিস কেন- এমন প্রশ্ন তুলে তারা প্রতিদিন মিছিল করে তাকে ঘেরাও করতে যাচ্ছেন। পুলিশ নাটকীয় ভূমিকা পালন করছে।
খাবার বহনকারী ভ্যানটি পুলিশ কেন বাধা দিলো, কেন থানা কিছু জানে নাÑ তা শুধু রহস্যঘেরাই থাকছে না, সরকারের বাড়াবাড়িকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে; যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো, ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো, ক্যাবল নেটওয়ার্কও কেটে দেয়া হলো। জনগণ এসব বাড়াবাড়ি গ্রহণ করেনি। তারপরও সরকার কেন কার্যত গৃহবন্দী একজন জাতীয় নেতাকে নিয়ে এমন অরাজনৈতিক আচরণ করছে, কেনই বা ন্যূনতম শিষ্টাচারও ভুলে যাচ্ছে, তা রীতিমতো উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়।
বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটভুক্ত কোনো দলই নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাদেরকে সব গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সরকার কোন ধরনের রাজনীতি করছে, তা বুঝে ওঠা কষ্টকর। প্রতিহিংসার মাত্রাজ্ঞানহীন এমন নিষ্ঠুরতা ও বাড়াবাড়ি জনগণকে স্বভাবতই বিুব্ধ করছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাবে তারা প্রতিবাদ করার সুযোগ হারিয়েছে। তাই সরকার একতরফা যে পুলিশি নিপীড়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে, তা এই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে শুধু ধ্বংস করে দিচ্ছে নাÑ আমাদের সংযম, মূল্যবোধ আর সাধারণ ভদ্রতাকেও চ্যালেঞ্জ করে চলেছে। এর প্রতিক্রিয়া কখনো সুখকর হওয়ার নয়।
আমরা এ ধরনের সব বাড়াবাড়ির নিন্দা করি। আশা করি, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার বিষয়টি সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান পাবে।

No comments

Powered by Blogger.