টকশোতে বক্তব্য দেখে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি- গণমাধ্যমে জবরদস্তি গণতন্ত্রচর্চাকে অচল করবে

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বারবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে দেশে-বিদেশে উদ্বেগ রয়েছে অনেকেরই। ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম নানা অজুহাতে বন্ধ করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সংবাদ প্রচার এবং বিভিন্ন টকশো। এর মধ্যে টকশো নিয়ে সংসদে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টিভি টকশোতে উসকানি দেয়া হচ্ছে। মানুষের লাশ ফেলে সেখান থেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। যারা প্রাইভেট টিভি চ্যানেলগুলোতে উসকানিমূলক কথা বলবে এগুলো দেখা হবে, মনিটর করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই ধরনের ঘটনায় উসকানি দেয়ার অধিকার তাদের নেই। তাহলে তারাও সমানভাবে দোষী হয়ে যাবে। এই খুুনের দায়দায়িত্ব তাদের ওপরও বর্তাবে। সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে বক্তৃতাকালে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপের আহ্বানকারী ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা জীবনে দল করতে পারে না, নির্বাচন করতে পারে না, কিন্তু তাদের মতায় যাওয়ার খায়েশ। তাদের খায়েশ মেটাতে গিয়ে শত শত মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। উনারা ভেবে বসে আছেন লাশের পথ বেয়ে মতা দখল করতে পারবেন। কিন্তু উনাদের সেই আকাক্সক্ষা পূর্ণ হবে না। কী দুর্ভাগ্য যে ইনারা এত বড় বড় নেতা, তারা একাধারে রাজনৈতিক দলও করে আবার সুশীলও হয়ে যায়। আর সেই সাথে সাথে টকশো। অথচ প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো আমারই দেয়া। বাংলাদেশে কোনো প্রাইভেট চ্যানেল ছিল না। ’৯৬ সালে সরকারে এসে আমিই প্রথম প্রাইভেট চ্যানেল দিই।
দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস পরিস্থিতিতে পেট্রলবোমা অগ্নিসংযোগ গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের যে ঘটনা ঘটছে তা উদ্বেগজনক। এ ধরনের পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে, যা কেউই প্রত্যাশা করেন না। আর সহিংস পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার বিষয়টিও প্রত্যাশিত। কিন্তু এ ধরনের সহিংসতা সৃষ্টির দায় যেভাবে টকশোর আলোচক সাংবাদিক বা বিশিষ্ট নাগরিকদের ওপর চাপানো হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এতে স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করে খুনের আসামি হওয়ার মতো ঝুঁকি নেয়ার মতো সাহস অনেকে পাবে না। সরকারে যারা থাকেন তাদের মধ্যে দলীয় বিবেচনায় সবকিছু মূল্যায়ন করার প্রবণতা দেখা যায়। সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনার মধ্যে তাদের অনেকেই উসকানি বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা দেখতে পান। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গণমাধ্যমকে দেখা হলে স্বাধীন গণমাধ্যমের উপস্থিতির যতটুকু এখন দেশে আছে তা-ও থাকবে কি না সন্দেহের কারণ রয়েছে। অথচ স্বাধীন গণমাধ্যম দেশে গণতন্ত্রচর্চার জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনিভাবে রাষ্ট্রে সুশাসন কায়েমের জন্যও এর প্রয়োজন। এ কারণে অমর্ত্য সেনের মতো অর্থনীতিবিদও স্বাধীন গণমাধ্যমকে দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। এ জন্য গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই স্তম্ভকে ভয়ভীতির মধ্যে পঙ্গু অবস্থায় ঠেলে দেয়া হলে তা থেকে কেউই লাভবান হবে না।
আমরা গণমাধ্যমের প্রতি আরো সহিষ্ণু হওয়ার জন্য রাষ্ট্রের নীতি নির্দেশকদের প্রতি আবেদন জানাতে চাই, যাতে এটি সমাজের দর্পণ হিসেবে দায়িত্বশীলতার সাথে তার ভূমিকা পালন অব্যাহত রাখতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.