২০০ বছর ধরে ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ ভিক্ষু

গত সপ্তাহে মঙ্গোলিয়ায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর মমি পাওয়া গেছে। ২০০ বছরের পুরনো এ মমির আবিষ্কার ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মমিতে জনৈক বৌদ্ধ ভিক্ষু বজ্রাসনে বসে আছেন। সিনিয়র বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বলছেন, তিনি মৃত নন বরং গভীর ধ্যানে রয়েছেন। মমিটি যারা খুঁজে পেয়েছেন শুধু তারাই নন, বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানীরাও বিস্মিত হয়েছেন। উত্তরমধ্য মঙ্গোলিয়ায় পশুর চামড়ায় মোড়া অবস্থায় মমিটি পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা এর ফরেনসিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন। এত নিপুণভাবে কেমন করে এতো দীর্ঘ সময় এটা সংরক্ষিত রয়েছে বিজ্ঞানীরা এখনও তা নির্ণয় করতে পারেননি। তবে অনেকে মনে করছেন, মঙ্গোলিয়ার শীতল আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হতে পারে। তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার টিকিৎসক ড. ব্যারি কেরজিন বলেছেন, মমির ওই ভিক্ষু ‘তুকদুম’ নামক বিরল একটি ধ্যানের অবস্থায় রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ধ্যানকারী কোন ব্যক্তি যদি ধ্যানের এ স্তরে অবস্থান করতে পারে তাহলে তিনি ‘বুদ্ধ’ হতে সক্ষম হবেন। তিনি আরও বলেন, ‘তুকদুম’ ধ্যানের অবস্থায় ধ্যানরত কয়েক ধ্যানকারীর সেবা করার সুযোগ আমার হয়েছিল। কোন ব্যক্তি যদি ধ্যানের এ স্তরে তিন সপ্তাহের বেশি অবস্থান করতে পারেন তাহলে তার শরীর ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর সবশেষে যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো ওই ব্যক্তির চুল, নখ আর পোশাক। তিন সপ্তাহ ধরে অবস্থান করাটা বিরল। ড. ব্যারি আরও বলেন, তবে শেষ পর্যায় পর্যন্ত আসতে সক্ষম হলে, ধ্যানস্থ ব্যক্তির আশপাশের মানুষজন আকাশে উজ্জ্বল রংধনু দেখতে পারেন কয়েকদিন ধরে। এর অর্থ হলো ওই ব্যক্তি ‘রংধনু শরীর’ প্রাপ্ত হয়েছেন। এটা ‘বুদ্ধ’ অবস্থানের নিকটবর্তী সব থেকে উঁচু স্তর। আর কোন ব্যক্তি স্তরে অবস্থান করতে পারলে তিনি বুদ্ধ হিসেবে রূপান্তরিত হবেন। উল্লেখ্য, মমিটি উদ্ধারের কিছুদিন আগে চুরি হয়ে যায়। যে ব্যক্তি মমিটি চুরি করেছিল সে কালো বাজারে তা বিক্রি করতে চেয়েছিল। মঙ্গোলিয়ার পুলিশ ওই ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। মমিটি উদ্ধারের পর এখন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ফরেনসিক এক্সপার্টিজে রাখা হয়েছে। মমির ভিক্ষু কে ছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে জল্পনা-কল্পনা চলছে যে তিনি লামা দাশি-দোরঝো ইতিগিলভ-এর শিক্ষক ছিলেন। উল্লেখ্য, দাশি দোরঝোকেও মমি করা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ১৯২৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বুরিয়াতিয়াতে শিষ্যদের তিনি বলে গিয়েছিলেন, তিনি শিগগিরই মারা যাবেন এবং ৩০ বছর পর যেন তার মৃতদেহ খুঁড়ে বের করা হয়। এরপর লামা দাশি দোরঝো বজ্রাসনে বসে ধ্যান করা শুরু করেন এবং সে অবস্থাতেই মারা যান। কথিত আছে, যখন তার মৃতদেহ খুঁড়ে বের করা হয়, তখনও তা সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রোষের আশঙ্কায় তার শিষ্যরা আবারও তাকে সমাহিত করেন। এরপর ২০০২ সালে পুনরায় তার মৃতদেহ খুঁড়ে বের করা হয় এবং তা সংরক্ষিত অবস্থাতেই মেলে। পরবর্তীতে তার মমি একটি বৌদ্ধ মন্দিরে স্থাপন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.