সরকারের দেড়গুণ বেশি ঋণের ল্যমাত্রা- অসমঝোতা অর্থনীতিকে অচল করে দেবে

চলমান অবরোধ-হরতালে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের হোঁচট খাওয়ায় ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ব্যয়নির্বাহের জন্য অনেক বেশি করে ঋণ নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্থবছরের দ্বিতীয় ভাগের মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের ল্যমাত্রা আগের ছয় মাসের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি ঋণ নেয়ার ল্যমাত্রা নির্ধারণের বিপরীতে বাস্তবে বাস্তবায়ন হয়েছে ৬ শতাংশ। কাক্সিত হারে উন্নয়নব্যয় করতে না পারায় সরকারের ঋণের ব্যবহার হয়নি। তবে সরকার বাকি সময়ে তার কর্মসূচি ঠিক রাখলে ছয় মাসে ৭২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হবে। আর সে কারণে প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত অর্থের। এ বিষয়ে প্রকাশিত নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন অনুসারে, বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে কাক্সিত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না এবার। এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে চলমান হরতাল-অবরোধ। এ কর্মসূচি আর কত দিন চলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে স্থবির ব্যবসাবাণিজ্যে আরো স্থবিরতা নেমে এসেছে। এত দিন নতুন বিনিয়োগ না থাকলেও চলমান বিনিয়োগের কারণে কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল অবরোধের কারণে তা-ও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে ব্যাপক ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এলে ঘাটতিব্যয় মেটাতে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হবে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণের ল্যমাত্রা আগের ছয় মাসের চেয়ে আগামী ছয় মাসে দেড়গুণ বাড়ানো হয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতি উন্নতি না হলে বিনিয়োগ-চাহিদা আগের মতোই থাকবে। এখন এমনিতেই ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে। বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যাংকগুলো কম পরিমাণে আমানত নিচ্ছে। আমানতকে নিরুৎসাহিত করতে ইতোমধ্যে আমানতের সুদহার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যেখানে ত্রেবিশেষে ১০০ টাকা আমানত নিতে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ব্যয় করা হতো, এখন তা ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বিনিয়োগ-চাহিদা না বাড়লে টাকারও চাহিদা বাড়বে না। আর টাকার চাহিদা না বাড়লে সরকার ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিলেও এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা না থাকার অর্থ হলো অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়া। এর প্রভাব ধীরে ধীরে প্রাণহীন করে ফেলবে অর্থব্যবস্থাকে। এতে দেশের অর্থনীতি স্বল্পচাহিদা, স্বল্পবিনিয়োগ, কর্মসংস্থানহীনতা, সামাজিক অসন্তোষ পরিণতিতে প্রবৃদ্ধিহীনতার এক দুষ্টচক্রে পড়ে যাবে। এই চক্র ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কোনো সন্দেহ নেই, রাজনীতিকে বাদ দিয়ে অর্থনীতিতে গতি আনা অথবা গতি রক্ষা করার কোনো উপায় নেই। আজ অর্থনীতিতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটির মূল উৎস রাজনৈতিক সঙ্কট। এই সঙ্কট উত্তরণে পদক্ষেপ না নিলে কোনোভাবেই অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটানো যাবে না। এই উপলব্ধির কথা আমরা সুশীলসমাজ থেকে শুরু করে বিশ্বসংস্থার সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পর্যন্ত সবার কাছে শুনতে পাচ্ছি। কেবল এই উপলব্ধি হচ্ছে না শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা যে সরকারকে নিতে হয়, তাতে কোনো সংশয় নেই। আমরা দেশ ও দেশের মানুষকে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচাতে রাজনৈতিক সঙ্কটের অবিলম্বে নিষ্পত্তি কামনা করছি। আলাপ-আলোচনা ছাড়া কোনোভাবেই এ সঙ্কটের নিষ্পত্তি করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.