খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন- টেলিফোন ইন্টারনেট ডিশ লাইনও নেই; মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা

হঠাৎ করেই গত শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনের বেলায় একে একে বিচ্ছিন্ন করা হয় টেলিফোন, ইন্টারনেট ও ডিশ লাইন সংযোগ। রাতের বেলায় আচমকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় কার্যালয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয় কার্যালয়ে। নির্ঘুম রাত কাটান বিএনপি চেয়ারপারসন। কার্যালয়ে অবস্থানরত অন্যরাও চরম দুর্ভোগে পড়েন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পর জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে কার্যালয়ে জরুরি জিনিসপত্র প্রবেশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  গতকাল সন্ধ্যায় কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসার পর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ছয় মহিলা সদস্যকে আটক করা হয়েছে। গুলশান কার্যালয় ছাড়াও কাছাকাছি ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইলের নেটওয়ার্কে সমস্যা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।   গত শুক্রবার বিকেলে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার না করলে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেয়ার হুমকি দেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ ঘোষণার ১২ ঘণ্টা পর খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো।
শুক্রবার রাত ২টা ৩৭ মিনিটে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ওই কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সাংবাদিকদের বলেন, ডেসকোর এক লাইনম্যান এসে গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ সময় তার সাথে গুলশান থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন।  প্রেসসচিব আরো জানান, কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণ জানতে চাইলে ডেসকোর ওই লাইনম্যান বলেন, আমরা কিছু জানি না। থানার নির্দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে এসেছি।  বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও পানি এবং গ্যাস সংযোগ গত রাত পর্যন্ত ছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সাময়িকভাবে জেনারেটর চালু করে কার্যালয়ে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই জেনারেটর কার্যালয়ের ভেতর আগে থেকেই ছিল।
এ দিকে গতকাল বেলা ১১টায় প্রায় ৫০টির মতো ফিল্টার পানির জার এবং দুপুর পৌনে ১২টায় বড় দু’টি ড্রামে করে জ্বালানি তেল বিকল্প গেট দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। তবে সাদা পোশাকে ওই কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘোরাঘুরি করছেন। গভীর রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর একে একে ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় কার্যালয়ের ডিশ লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সকাল ১০টার পরে টেলিফোন লাইন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। তিনি বলেন, কার্যালয়ের ভেতরে যে টেলিভিশন আছে তাতে ডিশ লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগও পাচ্ছি না। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাসাটি খালেদা জিয়ার কার্যালয়। গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে পুলিশি বেষ্টনীতে সেখানে অবরুদ্ধ হন তিনি। সেখান থেকেই ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন তিনি। পরে ১৮ জানুয়ারি গভীর রাতে ওই এলাকা থেকে সব ধরনের ব্যারিকেড প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া।
এ দিকে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে শাশুড়ির সাথে ওই কার্যালয়ে রয়েছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নিরাপত্তা সমন্বয়কারী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল (অব:) আবদুল মজিদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খানসহ বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তারা ওই কার্যালয়ে আছেন। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের ঘুম হয়নি বলে খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.