ছোট্ট প্রতিষ্ঠার বড় স্বপ্ন

খুদে শিল্পী প্রতিষ্ঠা চাকমা
সহপাঠীরা তাকে নিয়ে গর্ব করে। রাঙামাটি শহরের অনেক বাসিন্দার কাছেও ছোট্ট প্রতিষ্ঠা চাকমা এখন পরিচিত নাম। সেন্ট ট্রিজারস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থী আবৃত্তি, গান, ছবি অাঁকা—সব বিষয়েই সমান পারদর্শী। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয়েছে সে। গান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায়ও পেয়েছে বিভাগীয় পুরস্কার। বাংলাদেশ বেতারে শিশুশিল্পী হিসেবে কবিতা আবৃত্তি ও উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশন করে সবার নজর কেড়েছে প্রতিষ্ঠা। তার স্বপ্ন বড় শিল্পী হওয়া। চটপটে প্রতিষ্ঠার কথায় কোনো জড়তা নেই। আদিবাসী হলেও শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলে। কেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারোনি—এ প্রশ্ন শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর, ‘আগামীতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আমাকে সবাই আশীর্বাদ করবেন। আমি এখন আরও বেশি চর্চা করব।’
আবৃত্তির পাশাপাশি গানেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে সে। উচ্চাঙ্গসংগীতে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছে। আর কবিতা আবৃত্তিতে তো বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নই হয়েছে। পরে ঢাকার বিটিভি ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়ে চমকেও দিয়েছে সবাইকে। ওই প্রতিযোগিতার বিচারকেরা তো বেশ অবাকই হয়েছিলেন। আদিবাসী শিশুর মুখে এত সুন্দর বাংলা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন সবাই। কোন কবিতা বেশি প্রিয়—প্রশ্ন করতেই প্রতিষ্ঠা জানায়, কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকী ও কাঠবিড়ালি’ কবিতাটির কথা। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় কবিতাটি আবৃত্তি করেছিল সে। কবিতায় খুকি ও কাঠবিড়ালির ঝগড়া তার খুব পছন্দ। তবে নিজে কোনো বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়া করতে চায় না। সে সবাইকে ভালোবাসে।
বাবা পবন চাকমাকে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি সূত্রে জেলার বাইরে থাকতে হয়। মা সুজিতা চাকমা জানান, প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রে গোষ্ঠীভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া একক ও দলগত কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করে। সে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমীতে গান এবং চারুকলা একাডেমিতে চিত্রাঙ্কন শিখছে। পাশাপাশি তিনজন শিক্ষককের কাছে আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ও গানের তালিমও নিচ্ছে। এত সব করেও ক্লান্তি নেই খুদে শিল্পীর। তার কথা, ‘বড় হতে হলে সব শিখতে হবে। আর আমাকে তো অনেক বড় হতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.