নারীর ক্ষমতায়নে আরেকটি মাইলফলক- সেনাবাহিনীতে নারী সৈনিক

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রথমবারের মতো সৈনিক পদে নারীদের নিয়োগ এ দেশে নারীর ক্ষমতায়নের পথে আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসেবে যুক্ত হওয়া ৮৮১ তরুণীকে আমাদের অভিনন্দন। একই সঙ্গে এই উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর নীতিনির্ধারকরাও আমাদের সাধুবাদ পাবেন। বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এই তরুণীরা এর আগে ঘাটাইলের শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসে আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে এক বছর প্রশিক্ষণ নেন। আগামী দুই বছর ডিপ্লোমা ইন প্যারামেডিকস কোর্স সম্পন্ন করে সৈনিক পদমর্যাদায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, অপারেশন থিয়েটার, দন্ত বিভাগ, রেডিওগ্রাফারসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবেন। স্বীকার করতে হবে যে, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন বা লিঙ্গ সাম্য সংক্রান্ত নীতি ও কাঠামোগত ব্যবস্থা মন্দ নয়। বিশেষত রাষ্ট্র ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যেভাবে নারীর 'ক্ষমতায়ন' দৃশ্যমান, তা উন্নত বিশ্বের অনেকের জন্য বিস্ময়করও বটে। গত আড়াই দশক ধরে আমরা একটানা নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী পেয়ে এসেছি। বর্তমান সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতা তো বটেই; স্পিকার হিসেবেও পেয়েছি একজন নারীকে। ঘটনাচক্রে দশম সংসদের বাইরে থাকা অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাও একজন নারী। সংসদ, মন্ত্রিসভা, প্রশাসনেও নারীর অংশগ্রহণ তৃতীয় বিশ্বের বাস্তবতায় যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা দেখি, স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত নারী কোটার বাইরেও সাধারণভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং নির্বাচিতও হন। আমরা জানি, আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত পেশায় নারীর অংশগ্রহণ দীর্ঘকাল বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিরুৎসাহিত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য পেশার মতো এখানেও ক্রমে অর্গল ভেঙেছে নারী। স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার পুলিশ বাহিনীতে সাতজন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দিয়ে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছিল। পরে ১৯৮৬ সাল থেকে কর্মকমিশনের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবেও নারীর নিয়োগ শুরু হয়। এখন পুলিশ বাহিনীতে উচ্চতর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে সাত হাজারের বেশি নারী পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে নারীর অংশগ্রহণ স্বাধীনতার সময় থেকেই ছিল। আমাদের দু'জন নারী বীরপ্রতীকের একজন ছিলেন ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম। ২০০১ সাল থেকে সেনাবাহিনীর অন্যান্য কোরেও নারী সদস্য নিয়োগ সূচিত হলেও তা কর্মকর্তা পর্যায়েই সীমিত ছিল। সৈনিক পদেও নারীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই প্রক্রিয়া আরও বিস্তৃত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। আমরা আশা করি, মেডিকেল কোরের মতো অন্যান্য কোরেও নারী সৈনিক নিয়োগ হবে। বৃহস্পতিবার প্রথম নারী সৈনিক ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী ও শপথ কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, 'ফোর্সেস গোল ২০৩০' বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, সেনাবাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, অন্যান্য বাহিনীতেও নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তি ও সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে। একই সঙ্গে পরিবার থেকেই নারীর ক্ষমতায়ন ও যথাযথ মূল্যায়নের বিকল্প নেই, মনে রাখতে হবে। পরিবারে নারীর ক্ষমতায়নই সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত।

No comments

Powered by Blogger.