চলছে অবরোধ, বাড়ছে ক্ষতি- স্থবির ব্যবসা–বাণিজ্য by মাসুদ মিলাদ

(হরতাল–অবরোধে কমে গেছে পণ্য পরিবহন। ব্যস্ততা নেই কর্মচঞ্চল খাতুনগঞ্জে। ছবিটি গত ২৬ জানুয়ারি দুপুরে তোলা l ​জুয়েল শীল) খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপে প্রতি মাসে লেনদেন হতো ২০০ কোটি টাকা। হরতাল-অবরোধে গত জানুয়ারি মাসে এ লেনদেন নেমে এসেছে ৫০ কোটি টাকায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যত বাড়ছে, লেনদেন ততই কমে আসছে। বিদেশ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি করে বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় লোকসান হলে প্রতিষ্ঠানটি অন্য শিল্প–কারখানার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে ভারসাম্য বজায় রাখত। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে এসব কারখানার উৎপাদিত পণ্য সরবরাহও কমে এসেছে। পণ্য জমেছে কারখানার গুদামেও। যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভোগ্যপণ্য আমদানি থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছানো কিংবা শিল্প-কারখানার কাঁচামাল আমদানি থেকে শুরু করে প্রস্তুত করা পণ্য ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপে কাজ হয়। এসব ধাপের কোনোটিতে ব্যাঘাত হলে পর্যায়ক্রমে পুরো প্রক্রিয়াই স্থবির হয়ে পড়ে। টানা অবরোধ ও হরতালে এখন এই প্রক্রিয়ায় বারবার ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী কিংবা শিল্প-কারখানার মালিকেরা এখন আমদানি কিংবা প্রস্তুত করা পণ্য সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন। লাগাম ছাড়ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের অঙ্ক। তবে এ পর্যন্ত কী পরিমাণ লোকসান হয়েছে, তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। অবশ্য চট্টগ্রাম চেম্বারের দাবি, হরতাল-অবরোধে প্রতিদিন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে প্রায় ১৫০ কোটি, উৎপাদন খাতে ১০০ কোটি এবং পরিবহন খাতে ৬৮ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। বন্দরের কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বড় অংশ সরবরাহ হয় চট্টগ্রাম থেকে। সরকারি হিসাবে দেখা যায়, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ আনা-নেওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ আমদানি করেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী ও বন্দর সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ ছাড়া প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এসব পণ্য সড়ক, রেল ও নদীপথে ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা। আবার পেঁয়াজ, চালসহ কয়েকটি ভোগ্যপণ্য উত্তরাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে আনেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান, অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহন হলেও ব্যবসায়ীদের বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে পণ্য পরিবহনে। আবার ঝুঁকির কারণে অনেকে পণ্য গুদামে রাখছেন। বিক্রি কমে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহও কমে এসেছে। অবরোধের পাশাপাশি আজ রোববার থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতালে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, অবরোধে সীমিতভাবে গাড়ি চলাচল করলেও হরতালে এই হার একেবারে কম। ফলে পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া আরও স্থবির হয়ে পড়বে। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়বে। ব্যবসায়ী ও পরিবহন ঠিকাদারেরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল করলেও উত্তরাঞ্চল থেকে আগে যেসব ট্রাক-কাভার্ড পণ্য নিয়ে আসত সেগুলোর সংখ্যা কমে গেছে। ফলে চট্টগ্রামে পণ্য বহনকারী গাড়ির সংকট তৈরি হয়েছে। পণ্য পরিবহনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শীতল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক সুফিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জে ছোট আকারের ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৩-১৪ হাজার টাকা। গত শুক্রবার এক ট্রাক পণ্য পরিবহনের জন্য আমদানিকারককে ভাড়া দিতে হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। চাহিদার তুলনায় গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল করলেও উত্তরাঞ্চলে পণ্যবাহী গাড়ি পাঠাতে হিমশিম খেতে হয়। ঝুঁকির কারণে অনেক মালিক উত্তরাঞ্চলে গাড়ি পাঠাতে চাইছেন না।

No comments

Powered by Blogger.