নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানে ফিলিস্তিন তৎপরতা- আইসিসির সদস্য হতে উদ্যোগ

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সংক্রান্ত রোম সংবিধিসহ ২০টি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করেছেন। ইসরায়েলি দখলদারি অবসানে ফিলিস্তিনের প্রস্তাবটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটিতে নাকচ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ পদক্ষেপ নিলেন। ফিলিস্তিনিদের এ উদ্যোগের ফলে যুদ্ধাপরাধসহ নানা অন্যায়ের ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসিতে অভিযোগ আনার পথ প্রশস্ত হলো। জাতিসংঘে তোলা প্রস্তাবটি নাকচ হলে ফিলিস্তিন এ পথে হাঁটবে বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল। খবর এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি ও আল জাজিরার। মাহমুদ আব্বাস বুধবার পশ্চিম তীরের রামাল্লায় এক বৈঠকে চুক্তিগুলোতে সই করেন। আইসিসিতে ফিলিস্তিনের যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে এটাকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাক্ষরের পর প্রেসিডেন্ট আব্বাস ফিলিস্তিনি নেতাদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দেন, তা ফিলিস্তিনের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। এতে আব্বাস বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলিরা) আমাদের ওপর আক্রমণ করছে। প্রতিদিনই আমাদের জমির ওপর আঘাত আসছে। আমরা কার কাছে অভিযোগ করব? নিরাপত্তা পরিষদও আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন আমরা কোথায় যাব?’
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক মিশন প্রাথমিকভাবে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা বুধবারই স্বাক্ষরিত নথিগুলো জাতিসংঘে জমা দেবে। তবে পরে তারা জানায়, নথিগুলো আজ শুক্রবার জমা দেওয়া হতে পারে। রোম সংবিধি অনুসারে সই করা নথি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কাছে জমা দেওয়ার পর তিনি আবেদনটি বিবেচনা করবেন। মহাসচিব অনুমোদন দিলে ফিলিস্তিন ৬০ দিনের অপেক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করবে। এরপর যে মাস আসবে, সেই মাসের প্রথম দিন থেকেই তারা আইসিসির একটি পক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিলিস্তিন সদস্যপদ পাবেই এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই প্রক্রিয়ায় তারা আইসিসির সদস্যপদ পেতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন আইনবিশারদেরা।
জাতিসংঘে নাকচ হওয়া ফিলিস্তিনি প্রস্তাবটিতে এক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনের সঙ্গে চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি করা এবং ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়েছিল। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে সেটি মঙ্গলবার নাকচ হয়ে যায়। এর পরপরই ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদস্যপদ পাওয়ার উদ্যোগ নিল।
মাহমুদ আব্বাস অন্য যে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোতে সই করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র সংঘাতের ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা-সংক্রান্ত জেনেভা চুক্তি, আন্তদেশীয় সংগঠিত অপরাধ-সংক্রান্ত জাতিসংঘ চুক্তি, কূটনৈতিক প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত চুক্তি ইত্যাদি।
আব্বাসের এ পদক্ষেপের পরপরই ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনাদের সুরক্ষা’র জন্য তিনি যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। পাশাপাশি ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় ইসরায়েলে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে তেলআবিব। যুক্তরাষ্ট্রও আব্বাসের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের এ উদ্যোগ পুরোপুরিই উল্টো ফল বয়ে আনবে। এটা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণের পক্ষে কোনো সুফল দেবে না।

No comments

Powered by Blogger.