সংবাদ সম্মেলন থেকে উঠে গেলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান

নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে সংবাদ সম্মেলনের মাঝপথেই উঠে যান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। সংবাদ সম্মেলনেই কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহ আলমের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তিনি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় কমিশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরের কাজের বিবরণ উপস্থাপন করেন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক। সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান- এ পর্যন্ত যেসব সুপারিশ পাঠানো হয়েছে তার কি কি সরকার বাস্তবায়ন করেছে?  জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, সেটা আপনারা সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন। আমার কাছে কোন ফিডব্যাক নেই। তবে আমি ফিডব্যাক প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, আমরা মামলা জট নিয়ে যে সব কাজ করেছি সেগুলো সংসদীয় কমিটি গ্রহণ করেছে। এ পর্যায়ে কমিশনের সদস্য শাহ আলম বলেন, গত ৬ বছর ধরে আমি এখানে কর্মরত আছি। এ সময়ের মধ্যে ৩৯টি সুপারিশ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আকারে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী এগুলো তারা সংসদে পাঠাতে বাধ্য। কিন্তু একটি সুপারিশও তারা পাঠাননি। এ সময় বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত মত, কমিশনের অভিমত নয়। কমিশনের অপর সদস্য বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির একই অভিমত দেন। তখন শাহ আলম বলেন, এটা মতামতের বিষয় নয়। সাংবাদিকরা যে তথ্য জানতে চেয়েছেন আমি সেই তথ্যই উপস্থাপন করেছি। সেই তথ্য ভুল হলে পাল্টা তথ্য উপস্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু এখানে মতামত দেয়ার কিছু নেই। এ পর্যায়ে বিচারপতি খায়রুল হক রাগান্বিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করে চলে যান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফউজুল আজিম। গত এক বছরে আইন কমিশন ৯টি সুপারিশ পাঠিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো এ সব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এর সংশোধন, ময়মনসিংহ জেলা জজশিপে মামলার জট নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রতিবেদন, বিচারাধীন মামলার জট দূরীকরণ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণকল্পে কার্যপত্র প্রস্তুত, আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন আইন, ২০১৫ প্রণয়ন এবং অর্থঋণ আইন, ২০০৩ সংশোধনকল্পে আইন কমিশনের সুপারিশসূমহ। এছাড়া চলতি বছর যেসব আইন সংশোধনের সুপারিশ করবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ১৮৭২ সালে সাক্ষ্য আইন। এ সম্পর্কে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, এ সাক্ষ্য আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। কারন বিদেশে স্কাইপিতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ডকুমেন্টারি বিশেষ করে অডিও ও ভিডিও সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি আমাদের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়া কমিশন চিকিৎসা সেবা আইন, রাইট টু ফুড, শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিশন কাজ করছে বলে জানান বিচারপতি খায়রুল। তিনি বলেন, আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট খুবই দুর্বল। এর মধ্যে গবেষকের সংখ্যা খুবই কম। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে ৫০০০ বিচারক থাকা দরকার। সেখানে আছে মাত্র ১৮০০ জন। এর মধ্যে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.