অর্থনীতিতে গতি আনাই বড় চ্যালেঞ্জ -অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা

নতুন বছরে অর্থনীতিতে গতি আনাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাতে সবার আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে হবে। তৈরি করতে হবে আস্থার পরিবেশ। আর এ কাজটি করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতাও প্রয়োজন। তারা জানিয়েছেন, রাজনীতির গতিপথ ঠিক একই অবস্থায় থাকলে নতুন বছরে অস্বস্তি কাটবে না। শঙ্কা দূর হবে না। আর এমনটি হলে তা কারও জন্যই সুখকর হবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, দেশে সংঘাতের যে পরিবেশ ছিল তা এখনও আছে, সামনেও থাকবে। কারণ এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতার কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। সমঝোতা না হলে সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোন সম্ভাবনাও নেই। তিনি বলেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ একদিনেই পরিবর্তন হবে না। তবে চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা ভেবে দেখতে হবে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ স্থবিরতা অবস্থায় রয়েছে তা কাটাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বিদ্যুতের সমস্যা দূর করতে হবে। অবকাঠামো দুর্বলতা সমাধান করতে হবে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো- রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিতিশীলতা। যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থা যদি ভবিষ্যতে আরও খারাপ হতে থাকে তাহলে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। রাজনৈতিক ইস্যু ভালভাবে সমাধান না হলে যত কাজই করি না কেন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দূর হবে না। রপ্তানি বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে যে হারে রপ্তানি হচ্ছে তা থেকে বের হতে হবে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। এতে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে বর্তমানে দুর্নীতি অনেক কমেছে। সরকারি অর্থায়নে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজস্ব আদায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে গতি আনতে হবে। বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরা হয়েছে তার তুলনায় অনেক কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এসব না হলে সরকার বাধ্য হবে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে ঋণ নিতে হবে। অথবা সরকারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে টাকা তুলতে হবে। যা খুবই ব্যয়বহুল। এছাড়া, ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বর্তমানে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য অনেক কমে এসেছে। আন্তর্জাতিক পণ্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের পণ্যের মূল্য সমন্বয় করায় মূল্যস্ফীতি কমেছে। এছাড়া, বর্তমানে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে না।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, সুশাসনের অভাব, বিনিয়োগে গতি মন্থর ও অবকাঠামো দুর্বলতা দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক অগ্রগতির পথে চ্যালেঞ্জ। আগামী নতুন বছরে রাষ্ট্রকে সবচেয়ে যে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তা হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা। যা এর মধ্যেই কিছুটা সূচনা দেখা যাচ্ছে। আগামীতে রাজনৈতিক সঙ্কেত ভাল না হলে অর্থনীতিতে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ দূর করতে হলে আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে হবে। এর পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
প্রবীণ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নতুন বছর অস্বস্তিতেই কাটবে। কারণ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় দাঁড়িয়ে তারা কখনও সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বিএনপি তাদের লক্ষ্য অর্জনে বিগত সময়ে মোটামুটি ব্যর্থ হলেও সামনে তাদের চেষ্টার কমতি থাকবে না। ফলে কেউই স্বস্তিতে থাকবে না। আপাতদৃষ্টিতে দেশ পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলায় কোন অঘটন না ঘটলেও নতুন বছরে শঙ্কা থেকেই যাবে।

No comments

Powered by Blogger.