অনুমতি না পেলেও ৫ই জানুয়ারি সমাবেশ করবে বিএনপি

৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি। তবে অনুমতি না পেলেও ৫ই জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশ করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে দলটি। গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা অনুষ্ঠানে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ কথা জানান। উল্লেখ্য, গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে গত ২২শে ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র কাছে লিখিত আবেদন করে বিএনপি। আবেদনে সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাপলা চত্বর ও নয়াপল্টনকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। রিজভী আহমেদ বলেন, এক ব্যক্তির স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ৫ই জানুয়ারি সরকার তামাশার নির্বাচন করে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করেছে। এখন তারা বলছে, ৫ই জানুয়ারি ওই তামাশার নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে। রিজভী বলেন, আমরা গণতন্ত্র হত্যার ওই দিনটিতে ঢাকায় জনসভার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন করেছি। আমাদের নেতারা মহানগর পুলিশ দপ্তরে গিয়েছিলেন। পুলিশ বলেছে, জনসভার অনুমতি দেবে না। আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, ৫ই জানুয়ারি আমাদের কর্মসূচি করতেই হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রিজভী আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, সরকার আরব্য উপন্যাসের দৈত্যের মতো জনগণের ওপর চেপে বসে আছে। গণতন্ত্রকে তারা হত্যা করেছে। ৫ই জানুয়ারি গুম-খুনের সিনিয়ালের নায়ক এই অবৈধ সরকার। এখন আমরা গণতন্ত্রের কথা যাতে আর না বলতে পারি, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এক মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির অনেকে নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ করছে। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ওই মন্ত্রী ওই রকম মিথ্যাচার করছেন। আমরা জানি, এদেশের হাটে-বন্দরে-গ্রামে-গঞ্জের মানুষজন জানে, আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশে পাড়ি জমাতে নাকি বিমানের টিকিট কেটে রেখেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পূর্বসূরিদের পথ ধরে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
ডিএমপিতে বিএনপি প্রতিনিধি দল
এদিকে লিখিত আবেদনের ১০ দিন পরও সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে অগ্রগতি জানতে গতকাল বিকাল ৩টায় ডিএমপি কার্যালয়ে যান বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে দলের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন। কিন্তু কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাননি বিএনপি নেতারা। তাদের জানানো হয়, হরতাল থাকায় কর্মকর্তারা কন্ট্রোল রুমে কাজ করছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তারা যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন) সাহাবুদ্দিন খানের সঙ্গে দেখা করে ফিরে যান। এ সময় জয়নুল আবদিন ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, নতুন পুলিশ কমিশনার গোপালগঞ্জ গেছেন। তিনি এলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। পুলিশ কর্মকর্তা আমাদেরকে নতুন কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। ওদিকে ৫ই জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে ওই দিন সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে ভোটাধিকার হরণের দিনটিকে আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছি। ওই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ, কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। আর কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় সমাবেশ করা হবে। আশা করি, আমাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেয়া হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হতে চাই। ৫ই জানুয়ারি কর্মসূচি পালন করতে না দিলে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি আসবে। কর্মসূচিতে বাধা না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, বাধা দিয়ে, আক্রমণ করে জনগণের আন্দোলনকে কেউ কখনও দমাতে পারেনি, এবারও পারবে না। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ সাহস নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ালে এই অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ সরকারের পতন অনিবার্য। আমি মনে করি, জনগণের বিজয় আসন্ন।

No comments

Powered by Blogger.