কার্যকর সংলাপ চায় ইইউ, সহিংসতা ও ধরপাকড়ের নিন্দা আসকের

দেশে সংঘাতময় ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ এবং ‘গণতন্ত্র চর্চার স্থান সঙ্কুচিত হওয়া’য় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাংলাদেশে থাকা মিশন প্রধানরা। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে তারা ওই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় ইইউ দূতরা দেশব্যাপী চলমান সহিংসতায় মৃত্যু ও আহত হওয়া, সহায়-সম্পত্তি ধ্বংস করা এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার নিন্দা জানান। দুঃখ প্রকাশ করেন রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তদের আক্রমণের ঘটনায়। ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের ওই জোটের বাংলাদেশস্থ ডেলিগেশন প্রধানের কার্যালয় থেকে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে জানিয়ে ইইউ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- গণতন্ত্র চর্চার স্থান সঙ্কুচিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মিশন প্রধানরা বলেছেন, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে মুক্ত মতপ্রকাশের অধিকার, আন্দোলন ও সমাবেশের পথ রুদ্ধ করা উচিত হবে না। দূতরা সহিংসতা পরিহার এবং প্রকৃত সংলাপের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি তাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। এদিকে রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ইইউ দূতদের সঙ্গে মন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের বিষয়ে অবহিত করা হয়। এতে কূটনীতিকদের সঙ্গে মন্ত্রীর নিয়মিত আলোচনার অংশ হিসেবে ব্রিফিংটি আয়োজন করা হয় বলে জানানো হয়। সরকারি ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশনের প্রধান চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত জীবন নাশের ঘটনাগুলোর বিষয়ে। সহিংসতা দমনেরও আহ্বান জানান তিনি। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপে বিএনপি নেতা সাবেক রাষ্ট্রদূত রিয়াজ রহমানের ওপর গুলির ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওই ঘটনার তদন্ত নিশ্চিত করতে সরকার এই মধ্যে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। কূটনীতিকদের তিনি বলেছেন, মিস্টার রহমান কিংবা তার পরিবারের কোন সদস্য এ নিয়ে কোন মামলা করেননি। এ অবস্থায় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই ব্রিফিংয়ের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়া, নরওয়ে, ভ্যাটিকান ও সুইজারর‌্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদের  ব্রিফ করেন। সেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পরাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সহিংসতা ও ধরপাকড়ের নিন্দা আসকের
চলমান অবরোধ কর্মসূচি, সহিংসতা ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনায়  উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক)। বুধবার আসকের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৪ঠা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ রংপুরে চলন্ত বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে পুড়িয়ে শিশুসহ চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলার কারণে জনমনে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে না দেয়া, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড়, সংবাদমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের অধিকার অগণতান্ত্রিকভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান দরকার। সবার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা এবং বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশে বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলোকে যে কোন ধরনের সহিংসতা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.