ইরাকের ফেরারি পাখিরা

শীতে দেশ–বিদেশে পাড়ি দেওয়া একটি ইউরোপীয় স্টার্লিং
তীব্র শীত থেকে রক্ষা পেতে ইউরোপের স্টার্লিং পাখিরা বছরের এই সময়টায় ঝাঁকে ঝাঁকে ভিড় জমায় উত্তর ইরাকে। আরও অনেক পরিযায়ী পাখির মতো তারা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ইরাকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত থাকে। তবে যুদ্ধের ডামাডোলে এবার ইরাকে অতিথি পাখির সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। খবর এপির। ইরবিল এলাকায় অতিথি পাখি ধরতে প্রতিবছর মৌসুমি শিকারিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শিকার করা পাখিগুলো তাঁরা ইরবিল শহরের বাজারে বিক্রি করেন। বিদেশি পাখি আসার দুটি মাসে অনেকেই একে অস্থায়ী পেশা হিসেবে বেছে নেন। ক্রেতাদের কেউ কেউ মাংস খেতে পাখি কেনে। তবে বেশির ভাগ মানুষ পাখি কেনে তাদের মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিতে। স্থানীয়দের প্রচলিত বিশ্বাস, এভাবে বন্দী পাখি ছেড়ে দিলে পুণ্য হয়। ইব্রাহিম খলিল বংশপরম্পরায় পাখি শিকার করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার, কখনো বা সাত থেকে আট হাজার পাখি ধরতে পারি। এ বছর আমি হাজার তিনেক ধরতে পারলেই বরাত ভালো মনে করব।’
স্থানীয়রা মনে করছেন, ভয়াবহ যুদ্ধের কারণেই এবার পাখির সংখ্যা কম। পাখি শিকারি খালাম তাসিন বলেন, ‘পাখিরা চলে গেছে। ওরা এত শব্দ সহ্য করতে পারে না।’ ইরবিলের কাছের যে এলাকায় অতিথি পাখিরা থাকে, তার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং কুর্দি বাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর যুদ্ধ বিমানগুলো মাঝেমধ্যেই হানা দিয়ে বোমা ফেলে। যুদ্ধের ডামাডোলে পাখির সংখ্যা যেমন কমে গেছে তেমনি এর বিক্রিও গেছে কমে। মানুষের হাতে পয়সা না থাকায় এই অবস্থা। আগে পাখি মুক্ত করে দিতে গড়ে একজন শ দুয়েক করে কিনতেন। আনোয়ার ওয়ালিদ নামের এক ব্যক্তি সেদিন মাত্র চারটি পাখি কিনলেন। ৬৫ বছর বয়সী ওয়ালিদ একে একে আকাশে উড়িয়ে দিলেন পাখিগুলো। যুদ্ধকবলিত ইরাকের অনিরাপদ আকাশে মুক্তির আনন্দে ডানা মেলে দিল তারা।

No comments

Powered by Blogger.