টনক নড়েছে বনবিভাগের by এ, কে আজাদ

টনক নড়েছে বনবিভাগের। বাঁশের খাঁচায় রাখা হচ্ছে তেল মাখানো কচুরিপানা ও লতাপাতা। দেশীয় পদ্ধতিতে বাঁশের চটা দিয়ে খাঁচা বানিয়ে তার মধ্যে কচুরিপানা রেখে তেল নিষ্কাশন করা হচ্ছে। এর আগে তেল মাখানো কচুরিপানা ও লতাপাতা শেলা নদীর চরে গর্ত করে পুঁতে রাখা হচ্ছিল। জোয়ারের পানিতে ভেসে তা আবার শেলা নদীতে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। গত সোমবার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় “শেলার পাড়ে তেলের কবর”  শিরোনামে এ সংক্রান্ত একটি সরজমিন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজর কাড়ে ঊর্ধ্বতন মহলের। এর পরই স্থানীয় বনবিভাগের টনক নড়ে। তারা বাঁশের চটা দিয়ে খাঁচা বানিয়ে তার মধ্যে রাখছে তেল মাখানো কচুরিপনা। খাঁচার নিচে মোটা পলিথিন দিয়ে তার মাধ্যমে তেল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েক দিন এভাবে রাখার পর কচুরিপানা শুকিয়ে গেলে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ। চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গর্ত করে কচুরিপানা রাখাটা নিরাপদ নয়। নদী থেকে দ্রুত তেল অপসারণের জন্যেই কচুরিপানাগুলো নদীর পাড়ে গর্ত করে রাখা হয়েছিল। ওদিকে, গত রোববারের পর থেকে এ পর্যন্ত আর কোন ভাসমান তেল সংগৃহীত হয়নি। পদ্মা অয়েল কোম্পানিও  গুটিয়ে নিচ্ছে তাদের তেল কেনার পয়েন্ট। ৩টি পয়েন্টের মধ্যে ২টি পয়েন্টই ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তেল ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, গত ৪ দিনে কোন তেল পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৬৮ হাজার ২শ’ লিটার সংগৃহীত ভাসমান তেল কেনা হয়েছে। নদীর পানিতে আর কোন ভাসমান তেল না থাকায় লোকজন তেল সংগ্রহ করতে নামছে না। তা ছাড়া সংগৃহীত কচুরিপানা থেকেও তেমন একটা তেল বের হচ্ছে না। চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ভাসমান তেল সংগ্রহ বন্ধ থাকলেও কচুরিপানা ও লতাপাতা অপসারণ অব্যাহত রয়েছে। শেলা নদীর বিভিন্ন সংযোগ খাল থেকে তেল মাখানো ঘাস ও লতাপাতা অপসারণ করা হচ্ছে। সুন্দরবনে অবস্থান করা ইউএনডিপির বিশেষজ্ঞ দল শুক্রবারও বনের অভ্যন্তরে তাদের গবেষণা  চালিয়েছেন। আজ শনিবার এ বিশেষজ্ঞ দলের গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। আগামী ৩১শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের গবেষণার প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমেলিয়া ওয়ালস্ট্রম। উল্লেখ্য, গত ৯ই ডিসেম্বর ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামের একটি ট্যাংকার গোপালগঞ্জের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য খুলনার পদ্মা অয়েল ডিপো থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাচ্ছিল। পথে সুন্দরবনের শেলা নদীতে টোটাল নামের অপর একটি ট্যাংকারের ধাক্কায় সাউদার্ন স্টারের একপাশের খোল ফেটে ডুবে যায়। এতে ট্যাংকারের সব তেল ভেসে যায় নদীর  পানিতে। গত ১৬ দিনে ৬৮ হাজার ২শ’ লিটার ভাসমান তেল সংগৃহীত হয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার লিটার তেল রয়ে গেছে শেলা ও পশুর নদীর পানি, গাছপালা ও লতাপাতায়।

No comments

Powered by Blogger.