বাংলাদেশীর বর্ণনায় জাপানে শিক্ষানবিশ কর্মীদের দুর্দশা

জাপানে বিদেশী শিক্ষানবিশ কর্মীদের দুর্দশার কথা উঠে এসেছে এক বাংলাদেশীর বর্ণনায়। ২৬ বছর বয়সী রাবেয়া বেগম ২০১১ সাল থেকে নাগাসাকির একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, দাসের মতো আচরণ করা হয়েছে তার সঙ্গে। রাবেয়ার ঘটনায় সামনে এসেছে বিদেশী শিক্ষানবিশ কর্মীদের কাজ শেখার আশায় জাপানে পাড়ি দিয়ে কি রকম অপ্রত্যাশিত বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জাপানের আশাই শিম্বুন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে থাকাকালে রাবেয়াকে এক দালাল প্রস্তাব দেয়, জাপানে কারিগরি শিক্ষানবিশ হিসেবে তিনি মাসে ১ লাখ ৬০ হাজার ইয়েন (১৩৩০ ডলার) উপার্জন করতে পারবেন। অপেক্ষাকৃত উচ্চ মজুরির এ প্রস্তাবে ২০১১ সালে রাবেয়া জাপানের একটি পোশাক কারখানায় যোগ দেন। সেই দলে ছিলেন আরও ২০ চীনা কর্মী। বেতন পাওয়ার প্রথম দিনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে পড়েন রাবেয়া। তার সামনে থাকা ১ লাখ ইয়েনেরে মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট থাকা ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ ৪০ হাজার ইয়েন নিয়ে নেন। ক’দিন বাদে বাংলাদেশের যে দালাল তাকে কাজ পাইয়ে দিয়েছিল, সে নিয়ে নেয় আরও ৫০ হাজার ইয়েন। ফলে, মাস শেষে রাবেয়ার হাতে ছিল মাত্র ১০ হাজার ইয়েন। রাবেয়া জানান, ভোর পর্যন্ত কারখানায় কাজ করতে হতো তাদের। মাসে বন্ধ পেতেন মাত্র দুই থেকে তিন দিন। মাসে ৪শ’রও বেশি ঘণ্টা কাজ করেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে ২শ’ ঘণ্টা ওভারটাইম। এ হিসাবে তার ১০ হাজার ইয়েনের অর্থ ঘণ্টাপ্রতি মজুরি মাত্র ২৫ ইউয়েন। এমন দুর্দশার সঙ্গে তাল মিলানোটা স্বভাবতই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর তাই ২০১২ সালের আগস্টে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। এর জবাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে ফুকুওকা বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয়। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাবেয়া। বিমানে উঠতে অস্বীকৃতি জানান। রাবেয়া বর্তমানে একটি খাদ্য উৎপাদনকারী কারখানায় কাজ করছেন। জাপানে কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমতির কারণে দেশটির অনেক এলাকায় বড় ধরনের কর্মী সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে সেখানে বিদেশী শিক্ষানবিশ কর্মী রয়েছেন দেড় লাখ। শিনজো আবে সরকার এ সংখ্যা বাড়াতে পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছেন। আশাই শিম্বুনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাবেয়ার ঘটনায় সামনে এসেছে অনেক শিক্ষানবিসের সামনে কি ধরনের সমস্যা অপেক্ষা করছে। ২০১৩ সালে রাবেয়া আইনের মাধ্যমে প্রাপ্য মজুরি আদায়ের জন্য ওই পোশাক কারখানার প্রেসিডেন্ট ও অন্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। রাবেয়ার আইনজীবীর মতে, তিনি যদি ১ লাখ ইয়েনের পুরোটা পান, তার পরও নাগাসাকি জেলার সর্বনিম্ন ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ৬৪৬ ইয়েন হয় না। আশাই শিম্বুন ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য, শ্রম এবং জনকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় উঠে আসে, বিদেশী শিক্ষানবিশ কর্মী আছে এমন ১৮৪৪টি কর্মস্থলে শ্রম আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। এসব লঙ্ঘনের মধ্যে, শিক্ষানবিশদের ওভারটাইম প্রদানে ব্যর্থতা থেকে শুরু করে রয়েছে জোরপূর্বক দীর্ঘ সময় কাজ করানোর অভিযোগ।

No comments

Powered by Blogger.