গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রিমান্ডে

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেটের সামনে বুধবার সরকারি দলের এমপি ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল পুলিশ তাকে ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। যদিও শাহবাগ থানায় করা মামলায় বিএনপির এ নেতার নাম ছিল না। গতকাল ভোর ৬টায় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর তার বন্ধুর বাসা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, শাহবাগ থানায় মামলার এজাহারে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টু, সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সেক্রেটারি আকরামুল হাসান এবং সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের নাম থাকলেও গয়েশ্বরের নাম ছিল না। এর আগে তুরাগ থানার বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, কর্মী মহিউদ্দীন ও ওয়ার্কশপের মালিক মিজানূর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৪ পিস ত্রিমুখী সুচালো কাঁটা উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, গয়েশ্বর ফোন করে গ্রেপ্তারকৃত ওই তিনজনকে ত্রিমুখী সুচালো কাঁটা তৈরি করতে আদেশ দিয়েছিলেন। ওই কাঁটাগুলো দিয়ে নাশকতার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এ ঘটনায় একটি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ডিবি পুলিশের এ অভিযোগ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পরিবার ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের ডিসি কৃষ্ণপদ রায় জানান, বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেটের সামনে সরকারি দলের এমপি ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলা এবং গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনার মামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে ওই মামলা করেছিল। রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ডিবির অপর সূত্র জানায়, ধারালো কাঁটা দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগে তার নামে আরেকটি নাশকতার মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তিনি আরও জানান, নাশকতার অভিযোগে বিএনপির তুরাগ থানা সভাপতি আতিকুর রহমান, কর্মী মহিউদ্দীন ও ওয়ার্কশপের মালিক মিজানূরকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৪টি সুচালো ত্রিমুখী কাঁটা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পুলিশ দাবি করে, কয়েক দিন আগে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আটককৃত মহিউদ্দীনকে ফোন করে বলেন, প্রায় ১০০টি ধারালো সুচালো ত্রিমুখী কাঁটা তৈরি করতে। কাঁটাগুলো কার কাছে তৈরি করতে হবে তা পরামর্শ নেয়ার জন্য তুরাগ থানা বিএনপির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তখন মহিউদ্দীন আতিকের কাছে যান। এ সময় আতিক তাকে ১০০০ টাকা দেন এবং তুরাগ থানার কামারপাড়ার মিজানূর রহমানের ওয়ার্কশপে যেতে বলেন। পরে ওই ওয়ার্কশপে মহিউদ্দীন সুচালো ত্রিমুখী ১০০টি কাঁটা তৈরি করতে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর মহিউদ্দীন ওই ওয়ার্কশপ থেকে সেগুলো নিয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
ওই সূত্রটি আরও দাবি করেছে, সরকারি দলের লোকজন যদি গাজীপুরের ভাওয়াল কলেজ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেয় তাহলে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে সমাবেশ করতে হবে এবং ওই কাঁটাগুলো রাস্তায় ফেলে দিতে হবে। তবে আটককৃতরা এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন।
গতকাল ভোরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটকের পরেই বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী এবং তার আত্মীয়স্বজনরা রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের সামনে ভিড় করেন। এ সময় গয়েশ্বরের বড় মেয়ে অপর্ণা রায় দাস জানান, যেই মামলায় আমার পিতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ওই মামলায় তার নাম নেই। এখন তার নামে নতুন ভিত্তিহীন মিথ্যা নাশকতার মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। তার কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য কোন কারণ ছাড়াই তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি তার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
গয়েশ্বরের পূত্রবধূ নিপুণ রায় চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে ডিবি পুলিশের একটি দল রায়েরবাজারের গদিঘরের ঝর্ণা কুঞ্জতে অভিযান চালায়। তারা ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করে উপরে নিয়ে যায়। ওই সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। জনগণের আন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে তার শ্বশুরকে আটক করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.