মুদ্রা গুনতেই ২০ ঘণ্টা by রুদ্র মিজান

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পুরো দিন গুনেও শেষ করা যায়নি উদ্ধারকৃত মুদ্রা। রাজধানীর পল্টনের একটি বাসা থেকে উদ্ধারকৃত মুদ্রা গোনার কাজ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ২৫ জন কর্মকর্তা। মুদ্রা গোনার জন্য বাদ দিতে হয়েছে তাদের ছুটি। হযরত শাহ্‌জালাল (রঃ) বিমান্দবন্দর এলাকায় শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে এই মুদ্রা গোনার কাজ করা হয়। মুদ্রা গোনার স্থানটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী মুদ্রা ও সোনার বার রাখার দায়ে আটক মোহাম্মদ আলী সম্পর্কে তথ্যও সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তিনি একজন চোরাকারবারি বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তিনি একটি বড় চক্রের হোতা বলেই মনে করছেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম ইতিমধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে প্রকাশ করেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা। এ বিষয়ে আরও জানার জন্য মোহাম্মদ আলীর রিমান্ড আবেদন করা হবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোহাম্মদ আলী দুবাই যাতায়াত করতেন। এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুবাই থেকে অবৈধভাবে এসব স্বর্ণ ও মুদ্রা এনেছেন তিনি। তার সঙ্গে আরও অনেকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শুক্রবার শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসা করলেও বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ও স্বর্ণের ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে মোহাম্মদ একেক সময় একেক কথা বলছেন বলে গোয়েন্দারা জানান। তবে একাধিকবার তিনি জানিয়েছেন, স্বর্ণের বারগুলো কয়েক মাস আগে তার বন্ধু মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন তাকে রাখতে দিয়েছেন। রিয়াজ উদ্দিন একজন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। জানা গেছে, রিয়াজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। তিনি স্বর্ণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বিমানবন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গেও তার রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। রাজনীতিতে আসার বেশ আগে তিনি বিমানবন্দর এলাকায় একটি ব্যাংকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজধানীর পল্টন এলাকায় ছিলেন দীর্ঘদিন। ওই সময়েই মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ট হয়। তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে রিয়াজ উদ্দিন বলেছেন, মোহাম্মদ আলী নামে আমি কাউকে চিনি না। এছাড়া আমি কখনও অবৈধ কোন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই।
নগদ টাকার ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, অ্যাপার্টমেন্ট তৈরির জন্য জমি বিক্রি করে সাড়ে চার কোটি টাকা ঘরে রেখেছিলেন তিনি। তবে বিদেশী মুদ্রার ব্যাপারে সে অসংলগ্ন কথা বলছেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান।
উদ্ধারকৃত টাকা-রিয়াল গুনে শুক্রবার ইউনিক নম্বর লিখে জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলে গত রাতে জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান। মোহাম্মদ আলীকে প্রথম আসামি করে উপ-পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবেন বলে জানা গেছে। শুল্ক আইন, বৈদেশিক মুদ্রা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পাঁচটি বস্তার মধ্যে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ সৌদি রিয়াল। সুটকেসে পাওয়া গেছে প্রতিটি ১০ তোলা ওজনের ৫২৮টি স্বর্ণের বার। এর ওজন দেড় মণ। আনুমানিক বাজার মূল্য ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া উদ্ধারকৃত ১৫ লাখ রিয়ালের মূল্য বাংলাদেশী টাকার হিসাবে প্রায় তিন কোটি। রাজধানীর ঠিকানা নামের পুরানা পল্টনের ২৯/১ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলায় মোহাম্মদ আলীর বাসায় অভিযান চালিয়ে তা জব্দ করে শুল্ক বিভাগ ও পুলিশের গোয়েন্দারা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান মানবজমিনকে বলেন, মোহাম্মদ আলী একজন বড় মাপের চোরাকারবারি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই পুরো চক্রটাকে গ্রেপ্তার করা যাবে। তিনি জানান, বিদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা যে রকম স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয় মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে উদ্ধারকৃত বারগুলো ঠিক সে রকমই। স্বর্ণের বারগুলো কালো কাপড়ের কাঁথার মধ্যে সেলাই করা পকেটে ভরে পেঁচিয়ে রাখা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণসহ নানা অবৈধ কাজে লিপ্ত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.