স্ত্রী নিপীড়নে বাংলাদেশ শীর্ষে by নিয়াজ মাহমুদ

স্ত্রী নিপীড়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন বিবাহিত নারী স্বামীর হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। আর বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন মেয়েকে ১৯ বছর বয়স পেরোনোর আগেই ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। ‘হিডেন ইন পেইন সাইট’ (দৃষ্টির মধ্যেই সুপ্ত) শীর্ষক জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ১৯০টি দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া বাংলাদেশের পরে রয়েছে ভারত ও নেপালের অবস্থান। ৪২টি দেশের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি ১০ জনে ১ জন স্বামীর হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন। বাংলাদেশে স্বামীর হাতে স্ত্রীর যৌন নির্যাতনকে একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা নির্যাতন: সারা বিশ্বে বিবাহিত কিশোরীদের (১৫ থেকে ১৯ বছর) মধ্যে শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় প্রতি ৩ জনে ১ জন। এ হার সবচেয়ে বেশি ইকুয়েটোরিয়াল গিনিতে শতকরা ৭৩ ভাগ। আর সবচেয়ে কম ইউক্রেনে দু’ভাগ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এ হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ। ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ ক্ষেত্রে ৭ নম্বরে। এরপর ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এ হার যথাক্রমে ৩৪, ২৮ ও ২৩ ভাগ। প্রতিবেদনে বলা হয়, কম বয়সে বিবাহিত মেয়েরা পরিবারের মধ্যে স্বামী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের দ্বারা বেশি নির্যাতনের শিকার হন। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান মানবজমিনকে বলেন, এ কথা সত্য, নারীরা স্বামীর হাতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। তবে নারীরা নারীর হাতেও নিপীড়নের শিকার হন। যেমন শাশুড়ি ও ননদ। এজন্য নারী-পুরুষ সমানভাবে দায়ী। তিনি বিভিন্ন এলাকার কেস স্টাডির চিত্র থেকে বলেন, এখন শুধু মারা হয় না মারামারিও হয়। একজন মানুষ বা পুরুষ তার স্ত্রীকে নিপীড়ন করবে বা গায়ে হাত তুলবে- এটা হওয়া উচিত নয়। সমর্থনযোগ্যও নয়। আমি মনে করি এজন্য কারও আত্মহত্যারও দরকার নেই। কোন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মিল না হলে ডিভোর্স হতে পারে। তবে আমি এও মনে করি, সহনশীলতা উভয় পক্ষের জীবনকে সুন্দর করতে পারে। এলিনা খান বলেন, শহর থেকে গ্রামে ধনী-দরিদ্র সর্বত্র একজন পুরুষকে তারই (পরিবারের সদস্যরা) শাশুড়ি, শ্বশুর, ননদ বা দেবর প্ররোচিত করে নারীকে নিপীড়ন করতে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সরকারদলীয় সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূ শামারুখের মৃত্যুর ঘটনায় তার পিতা নূরুল ইসলাম বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার আসামি শামারুখের স্বামী হুমায়ন সুলতান ওরফে সাদাব, শ্বশুর খান টিপু সুলতান ও শাশুড়ি জেসমিন আরা বেগম। সাদাব বর্তমানে কারাগারে। আর শ্বশুর ও শাশুড়ি জামিনে রয়েছেন। মেয়ে শামারুখের হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি সাক্ষাৎ করেছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হবে বলে প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছেন। নারী নেত্রীরা বলেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার নারী। তার পরও স্ত্রী নিপীড়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে উঠে এসেছে। যে কোন মূল্যে এ অবস্থান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.