ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণহীন? ফয়েজের দাবি, ছবিটা তাঁর নয়। তাঁর মতো দেখতে অন্য কারও

অস্ত্রধারী সেই ফয়েজ ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। গতকাল তাঁকে ফোনে পাওয়া গেছে। অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার সেই ছবিটি প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন তো আমি দাবি করব, ছবিটা আমার নয়। আমার মতো দেখতে অন্য কেউ থাকতে পারে না? তবে এখন বলে লাভ কী, আপনারা যা লেখার, তা তো লিখে দিয়েছেন। আর আজকের (শুক্রবার) রিপোর্টে তো আমি পুরাই হতাশ। আমারে যা ইচ্ছা বলা হইছে।’
ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজ ফয়েজ বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। পেশাদার ক্যাডার না। ঢাকা কলেজের আশপাশের কোনো মার্কেটের কেউ বলতে পারবে না, আমি কোনো দিন চাঁদাবাজি করেছি।’
ঢাকা কলেজের ছাত্র আসাদুজ্জামান ফারুক হত্যার ২ নম্বর আসামি ফয়েজ। সেই মামলায় জামিন নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে ফয়েজ বলেন, ‘ভাই, ওটা তো একটা পলিটিক্যাল কেস। ফারুকের অভিভাবক থাকা সত্ত্বেও মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা সাকিব হাসান। বিষয়টা আপনারাই বোঝেন।’
বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ছাত্রলীগ নেতা ফয়েজ বা এই পক্ষের অন্য কাউকে গ্রেপ্তারে পুলিশ কোনো তৎপরতা দেখায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, যদি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসে এবং মামলাগুলোর তদন্তে যদি কারও যোগসাজশ পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, উচ্চপর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পেলেই তাঁরা ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতারা প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পুলিশেরও এখন কিছু করার নেই।
তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি দলের কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের ‘অতি উৎসাহী’ নেতা-কর্মীরা নানা অঘটনে জড়িয়ে পড়ায় দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পর ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করার কথা বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তাঁরা সংগঠনে সক্রিয় থাকেন। বকশীবাজারের সংঘর্ষেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথিত ‘বহিষ্কৃত’ আবদুল আজিজ ফয়েজকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।
ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করার ব্যাপারে ছাত্রলীগের প্রতি দলের কোনো নির্দেশনা ছিল না। এক মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার জের ধরে চাপের মধ্যে আছে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপস সরকার নিহত হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তঃকোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ৭ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা যাননি। ১৪ ডিসেম্বর এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারছেন না ছাত্রলীগের নেতারা।
নেতাদের মতে, এই চাপ থেকে উত্তরণের জন্য হঠাৎ তাঁরা কিছু একটা করে দেখাতে চাইছেন। আওয়ামী লীগ নেতারাও এমনটাই মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের দুজন জ্যেষ্ঠ নেতার মতে, আসলে ছাত্রলীগের ওপর আওয়ামী লীগের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বেশ আগেই। অনেক দিন ধরেই ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা শোনা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এখন বর্তমান নেতৃত্বের বিদায়ের পালা। কিন্তু সম্মেলনও করা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছুই যে নিয়ন্ত্রণে, তা বলা যাবে না। সরকারের ভেতরেও সরকার আছে। দলের ভেতরেও দল আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল। একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে একটি ছাত্রসংগঠনকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। আর এ সংগঠনে যে অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী নেই, তা-ও বলা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.