তৈরি হলো অটো পালকি by জিয়া শাহীন

এবার আধুনিক পালকি তৈরি করলেন বগুড়ার যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন। এই পালকি আবিষ্কারের ফলে অনেক বছরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনলেন তিনি। এবার তিনি এই পালকি আবিষ্কারের মাধ্যমে পুনরায় আলোচনায়  আসছেন। ইতিমধ্যেই এই বাহনটি বাজারজাতের প্রস্তুতি চলছে। এক সময় কাঠের পালকি না হলে বিয়েই হতো না। ৩ জন করে বিয়ারা থাকতো। তাদের পোশাক ছিল লাল ফতুয়া এবং হাতে থাকতো লাঠি এবং লাঠির মাথায় থাকতো বল্লম। পরনে সাদা ধুতি, মাথায় গামছা বাঁধা থাকতো। বড় বড় গোঁফ। তাতে সরিষার তৈল মাখাইয়া গোঁফ পেঁচাইয়া রাখতো। পালকি চলমান অবস্থায় তাদের মুখে বুলি ছিল হু-হুম না, হু-হুম না। বর-কনে দু’জনই পালকিতে চড়ে বসে থাকতো। পালকিটি দু’জানালাবিশিষ্ট কাঠের তৈরি। জানালায় থাকতো পাতলা লাল-রেশমি কাপড়। পালকিটি যারা বহন করতেন তারা সংখ্যায় ৮জন। ৬ জন নিয়মিত বহন করতেন। আর ২ জন কাঁধ বদল করার জন্য রেডি থাকতো। এভাবে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা হতো। এই পালকি করে জমিদার-জমিদারণীরাও বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শনের জন্য যেতেন। কারণ, এই পালকি ছিল তাদের বাহন। আজ তা প্রায় বিলুপ্তের পথে। এখনকার প্রজন্ম জানেই না বা দেখেওনি পালকি জিনিসটা কি বা কোন কাজে  ব্যবহার হয়। তা দেখতে কেমন। তাই নতুন রূপে চাকা লাগায়ে ইঞ্জিনের সঙ্গে সেটিং করে ৩ থেকে ৪শ’ বছরের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পালকি ২০১৪ সালের অটো পালকি রূপে ফিরিয়ে এনেছে বগুড়া তথা দেশের আলোচিত যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন।  অটো পালকির চালানোর জন্য হারিয়ে যাওয়া স্টিম  ইঞ্জিনে আদলে তৈরি করা হয়েছে। সেই আমলে কয়লা চালিত রেলগাড়ি এখনকার প্রজন্মরা দেখেনি কিভাবে ধোঁয়া বের হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সেই গাড়িটা নির্ভুল ভাবে তৈরি করেছেন আমির হোসেন। এই পালকিটিতে আসন সংখ্যা রয়েছে ২২টি। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো যাবে আসন। পালকিটি প্রতি ঘণ্টায় পেট্রোলে চলবে ১২ কিলোমিটার। এই পালকির গতি ৩০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। এই যন্ত্র চালিত পালকিটির মূল্য ৮ লাখ টাকা। আমির হোসেন বলেন, দেশে বিভিন্ন জেলায় যতগুলো কমিউনিটি সেন্টার আছে সেগুলোতে এই অটো পালকি সংযোজন করতে পারলে তাদের মান আরও বাড়বে। ভাড়াও বেড়ে যাবে ওই কমিউনিটি সেন্টারের। কারণ, বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনের গায়ে হলুদ মাখার জন্য বাড়িতে যোগাযোগের জন্য এই বাহনটিই উপযুক্ত হবে। এছাড়াও শিশু পার্কের জন্যও উপযুক্ত হবে। শিশু পার্কের মান বাড়ানোর জন্য এই অটো পালকি নিয়ে বিনোদনের কাজও হবে। উপরন্তু মাঝে মধ্যে এটা দিয়ে বিয়ে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দিতে পারবে।
আমির হোসেনের আশা, শিশু পার্ক কিংবা দেশের যে কমিউনিটি সেন্টার আছে, তারা এই ঐতিহ্য ধরে রেখে এই নতুন প্রজন্মকে বুঝাতে পারেন- এই পালকি। সরকার চাইলে বিদেশী অতিথিদের এয়ারপোর্ট থেকে অভ্যর্থনা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করতে পারেন নতুন পালকি। কারণ বৃটিশ রাজকীয় কোন অনুষ্ঠান হলে এই ধরনের বাহন মাঝে মধ্যে তারা বের করে থাকেন। তাই বাংলাদেশের সরকার এ ধরনের বাহন ভিআইপি অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
উল্লেখ্য, এর আগে আমির হোসেন তৈরি করেছেন মাছের খাদ্য, মুরগির খাদ্য, গো-খাদ্য, চিকন সেমাই মেশিন, ইট ও পাথর ভাঙা মেশিন, ধান ও ভুট্টা মাড়াই অটো মেশিন, গুটি ইউরিয়ার সার, জৈব সার তৈরি মেশিন, ধানকাটা মেশিন, জমি চাষ যন্ত্র, ইট তৈরি পরিবেশবান্ধব অটো মেশিন, পাটের রিবর রেটিং ছালকরণ মেশিন, অটো পামওয়েল মেশিন, সুগারবিট থেকে গুড় ও চিনি তৈরির অটো মেশিন, জ্বালানিবিহীন গাড়ি। যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত। তিনি দেশ-বিদেশে কৃষি পদক পেয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.