মালয়েশিয়ার সঙ্গে চার চুক্তি ও সমঝোতা

জনশক্তি রফতানি, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, পর্যটন ও সংস্কৃতি খাতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি, একটি প্রটোকল ও দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার পুত্রাজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাসস। স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে একটি হচ্ছে দুই দেশের মধ্যকার ‘ভিসা প্রক্রিয়ার অসম্পূর্ণ শর্তগুলো দূরীকরণ’ চুক্তি। এ ছাড়া মানবসম্পদ রফতানির বিষয়ে ২০১২ সালে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক সংশোধনে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রটোকলের ফলে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকের কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা পর্যায়ক্রমে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে। এছাড়াও পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ে সহযোগিতায় দু’টি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে দুই দেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় পুত্রাজায়ায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ নজিব বিন তুন আবদুল রাজাক তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় একটি ছোট শিশু প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়। মালয়েশীয় সেনাবাহিনীর মালে রয়্যাল রেজিমেন্টের একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়। প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে পারদানা মিটিং রুমে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। সেখানেই একটি চুক্তি, একটি প্রটোকল ও দু’টি সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় যান। আজ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ দেখার আমন্ত্রণ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পরবর্তী প্রবৃদ্ধির অংশীদার হতে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে আমি বাংলাদেশে যাওয়ার উষ্ণ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা গিয়ে প্রকৃত বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করুন। বাংলাদেশের পরবর্তী প্রবৃদ্ধির বিকাশে নিজেদের অংশীদার করুন।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার কুয়ালালামপুরের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগবিষয়ক সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের প্রকৃত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ হিসেবে পুনরায় বিবেচনা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দশক ধরে আজকের আধুনিক মালয়েশিয়া গড়তে আপনাদের অনেকেই অবদান রেখেছেন। আমি বিশ্বাস করি একই সুযোগের হাতছানি বাংলাদেশেও রয়েছে। সীমাবদ্ধতা ও নিুপর্যায়ের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিনিয়োগের যে সুযোগ ও প্রণোদনা দিচ্ছে তা আপনাদের সদয় বিবেচনার দাবি রাখে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়া সাউথ সাউথ অ্যাসোসিয়েশনের (এমএএসএসএ) প্রেসিডেন্ট আজমান হাশিম এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার একেএম আতিকুর রহমান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া সরকারের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এস সামি ভেল্লু, মালয়েশিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড এক্রিডিটেশন কাউন্সিল ডাটুকের চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনসুর, এমরেইল এসডিএন বিএইচডির নির্বাহী পরিচালক ড. অরবিন্দ হরি নারায়ণ, এক্সিসজাভা গ্র“পের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বেন্নি হো এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগ প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। ফেডারেশন অব চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আরও প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এসব চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তরিত করতে পূর্ণ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের এফডিআই (বিদেশী বিনিয়োগ) রয়েছে এবং দেশের বৃহত্তর চাহিদা মেটাতে মালয়েশিয়া থেকে মানসম্পন্ন বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগসক্ষম পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে ১৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি সড়ক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পর্যটন ও সেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানি সরবরাহের মতো অবকাঠামো খাতগুলো আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। একইভাবে খাদ্য ও কৃষি খাতের পুরোটাই হবে উৎসাহব্যঞ্জক। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বসহ (পিপিপি) যে কোনো ধরনের অংশীদারিত্বের বিষয় বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের বর্তমান অবস্থা, কর ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা আবাসন, নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতে তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
বিনট্যাঙ্ক জেভি কনসোর্টিয়ামের চেয়ারম্যান ড. এম সুয়িব কাশমানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারদিকে রেল সার্কুলার লাইন নির্মাণে তার (কাশমান) প্রস্তাবকে সরকার স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.