মৌলভীবাজারে দেড় লাখ টাকার চুক্তিতে হত্যা

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আলোচিত আনোয়ার বক্সকে হত্যা করা হয় মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে। কাজ শেষ হওয়ার পর ৩৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। প্রথমে লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। গন্ধ বের হলে মানুষ টের পাবে ভেবে সিদ্ধান্ত বদল করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। এই ঘটনায় জড়িত ৫ কিলারের প্রধান জাকির হোসেন (২৮) গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে জানিয়েছে। চুক্তির বিষয়ে কথোপকথনের একটি মেমোরি কার্ড পুলিশ উদ্ধার করেছে জাকিরের কাছে থেকে। তদন্ত  কর্মকর্তা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে গতকাল (বুধবার) জাকির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় সদর উপজেলার জগৎপুর গ্রামের আবদুস সুবহানের বক্স পরিবারের সঙ্গে একই গ্রামের আবদুল মালিকের বিরোধ বাধে এক বৎসর পূর্বে ভিটে দখল ও বাড়ির রাস্তা নিয়ে। এই ঘটনায় একটি পিটিশন মামলা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। পরে আবদুস  সোবহান জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি  মোশন মামলা করেন। এই ঘটনার পর থেকে দু’পক্ষের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। সোবহান বক্সের পরিবারের অভিযোগ গত ১৩ই নভেম্বর সোবহান বক্সের ছেলে আনোয়ার বক্স (৩২) মামলার তথ্য সংগ্রহ করতে মৌলভীবাজার কোর্ট প্রাঙ্গণে যায় এবং অপহরণের শিকার হয়। এই ব্যাপারে ঘটনার পরপর তাদের মামলার প্রতিপক্ষকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে মৌলভীবাজার পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে এই ব্যাপারে জিডি হয় এবং পুলিশ তদন্ত শুরু  করে। পুলিশের এক সূত্র জানায় তারা মোবাইল ট্রেকিং করে প্রথমে কালেঙ্গায় অবস্থানকারী আনোয়ার বক্সের এক বন্ধু জাকির হোসেনের ঘটনার সঙ্গে  সংশ্লিষ্টতার কথা জানতে পারে। গত ২২শে নভেম্বর বিকালে আনোয়ার বক্সের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ বর্ষিজোড়া ইকো পার্কের পূর্ব দিকে জনৈক বাচ্ছু মিয়ার ভূমি থেকে। পুলিশ এই দিন রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কালেঙ্গা এলাকার মুকিত (২০) ও শফিকুল ইসলাম প্রকাশ আলম (২০)-কে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন এই দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং জানান আনোয়ার বক্সকে হত্যা করার জন্য জাকির হোসেনের পরিকল্পনামতে তারা মোট পাঁচজন অংশ নেন। জাকির চারজনকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলে। হত্যাকা-ের পর ৪ জনকে নগদ ৮ হাজার টাকা দেয়। বাকি টাকা পরে পরিশোধের কথা বলে। পুলিশ খবর নিয়ে জানতে পারে জাকিরসহ ৫ জনকে আনোয়ার বক্সের পরিবারের প্রতিপক্ষরা ভাড়া করে অর্থের বিনিময়ে। জাকিরের সঙ্গে আনোয়ার বক্সের ঘনিষ্ঠতা থাকায় জাকিরই পরিকল্পনা করে ১৩ই নভেম্বর সন্ধ্যায় ইকোপার্ক এলাকায় মোবাইল ফোনে ডেকে নেয় এবং উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে প্রথমে লাশ ফেলে আসে ঘটনাস্থলে। পরের দিন এই লাশ আবার ৫ জন মিলে মাটির গর্তে পুঁতে রাখে। এদিকে দুই হত্যাকারী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি  দেয়ার পর পুলিশ মূল পরিকল্পনাকারীসহ অন্য  আসামিরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছে। গতকাল ভোরে সদর উপজেলার মাতার কাপন এলাকা থেকে হত্যাকারী জাকির হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে জাকির পুলিশকে জানায়, ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি হয় আনোয়ার বক্সের প্রতিপক্ষের সঙ্গে। আর এর মধ্যস্থতা করে শ’ আদ্যাক্ষর যুক্ত এক ব্যক্তি। তার বাড়ি শহরে। আনোয়ার বক্সকে হত্যার পর মোট ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। জাকির জানিয়েছে, ঘটনার পর সে চট্টগ্রাম পালিয়ে গিয়েছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মডেল থানার এসআই আবুল হোসেন ও কোর্ট সূূত্রে জানা যায়, আসামি বিকাল ৩টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট  জুলফিকার আলীর আদালতে ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা জানিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.