বাংলাদেশের গার্মেন্টে শিশুশ্রম ব্যবহার হচ্ছে by দীন ইসলাম

বাংলাদেশের গার্মেন্টসহ ১৫ ধরনের পণ্য উৎপাদনে শিশু ও জবরদস্তিমূলক শ্রম ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ১লা ডিসেম্বর মার্কিন শ্রম দপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশনস রি-অথরাইজেশন অ্যাক্ট (টিভিপিআরএ)’ তালিকায় বাংলাদেশের নাম স্থান পেয়েছে। এ তালিকায় গার্মেন্ট, বিড়ি, ইট, শুকনা মাছ (শুঁটকি), ফুটওয়্যার, ফার্নিচার (স্টিল), গ্লাস, চামড়া, দিয়াশলাই, পোল্ট্রি, লবণ, চিংড়ি, সাবান, টেক্সটাইল এবং টেক্সটাইল (পাট)-এর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ সব পণ্য উৎপাদনে শিশু ও জবরদস্তিমূলক শ্রম ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে শুঁটকি উৎপাদনে একই সঙ্গে শিশু ও জবরদস্তিমূলক শ্রম ব্যবহার করা হয়। বাকি পণ্যগুলো উৎপাদনে শুধু শিশুশ্রম ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি জানিয়ে গত ২রা ডিসেম্বর বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অনুবিভাগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের ডিপ্লোমেটিক নোট (কূটনৈতিক পত্র) যোগ করে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মানবজমিনকে বলেন, গার্মেন্ট সেক্টরে কোন শিশু শ্রমিক নেই। শতভাগ শিশু শ্রমমুক্ত করতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে মালিক-শ্রমিকদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে। এ সংক্রান্ত ইন্সপেকশন রিপোর্টও আমাদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, সব সেক্টরে শিশুশ্রম মুক্ত করবো। এর মধ্যে গার্মেন্ট সেক্টরে সফল হয়েছি। কিছু সেক্টরে শিশুশ্রম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু সেক্টরে এখনও শিশু শ্রমিকরা কাজ করছে। এগুলো রাতারাতি ঠিক করা যাবে না। এ জন্য আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। আশা করছি, ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়েছে, টিভিপিআরএ তালিকায় বাংলাদেশের তৈরী পোশাক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য পণ্য রয়েছে ওই তালিকায়। স্বাধীন ও বহুমুখী প্রশ্নের ভিত্তিতে নিজস্ব চ্যানেলে তদন্তের মাধ্যমে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। শিশুশ্রম ব্যবহার হচ্ছে না- এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে বাংলাদেশ সরকারকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। তখন মার্কিন সরকারের শ্রম দপ্তর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। কূটনৈতিক চিঠির সঙ্গে পাঠানো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, মার্কিন দূতাবাসের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম দপ্তর ১লা ডিসেম্বর ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশনস রিঅথরাইজেশন অ্যাক্ট (টিভিপিআরএ) তালিকা প্রকাশ করেছে। যে সব পণ্য উৎপাদনে শিশুশ্রম ও জবরদস্তিমূলক শ্রম ব্যবহৃত হয় বলে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম দপ্তর মনে করে ওই তালিকায় সে সব পণ্য তালিকাভুক্ত হয়। টিভিপিআরএ তালিকায় বাংলাদেশের তৈরী পোশাক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে। গতকাল বিকালে বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় চিঠি পেয়েই কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গার্মেন্টে শিশুশ্রম মুক্ত হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন বাছাই করছে। এগুলো পাঠানো হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও তাদের মন্ত্রণালয়ের অবস্থান তুলে ধরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির কাজ শুরু করেছে। এর আগে ২০১৩ সালের ২৮শে জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করে মার্কিন সরকার। বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। জিএসপি স্থগিত সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত থাকবে। সময়ে সময়ে এটি পর্যালোচনা হবে। কিন্তু এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে দেন-দরবার অব্যাহত রয়েছে। এখন নতুন করে মার্কিন শ্রম দপ্তরের শিশুশ্রমিক ব্যবহারকারীর তালিকায় বাংলাদেশের গার্মেন্টের নাম ওঠায় নতুন ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.