স্কুলমাঠে ইলিয়াস মোল্লার বস্ত্রমেলা by কমল জোহা খান

(ছবি:-১ বিদ্যালয়ে ৭ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। মেলা চলার কারণে স্কুলের শেষ সময়ের ক্লাস ও পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন। ছবি: আশরাফুল আলম) (ছবি:-২ মিরপুর সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তাঁত ও বস্ত্রমেলা আয়োজনের ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়নি । ছবি: আশরাফুল আলম) (ছবি:-৩ বিদ্যালয়ে ৭ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। মেলা চলার কারণে স্কুলের শেষ সময়ের ক্লাস ও পরীক্ষার প্রস্তুতি ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন। ছবি: আশরাফুল আলম) প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে ৭ ডিসেম্বর থেকে। এর আগেই মিরপুর সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তাঁত ও বস্ত্রমেলা শুরু করেছেন ঢাকা-১৪ (পল্লবী) আসনের সাংসদ ইলিয়াস আলী মোল্লা। মহান বিজয় দিবসের নামে আয়োজিত এই মেলা আয়োজনের ব্যাপারে অনুমতি নেওয়া হয়নি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। মেলা চলার জন্য স্কুলের শেষ সময়ের ক্লাস ও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। তাঁরা বলছেন, শুধু এবারই নয়, স্বাধীনতা দিবস, পয়লা বৈশাখ, ঈদ-পূজার নাম করে বছরের প্রায় ছয় মাস এই স্কুলের মাঠে মেলা চলে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ ইলিয়াস আলী মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলা হবে এটা জানতাম, তবে পরীক্ষার সময় যে হবে এটি জানতাম না। পরীক্ষার সময় মেলা বন্ধ থাকবে, আমি নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছি।’
আর মেলার তত্ত্বাবধায়ক জিন্নাত আলী মাতব্বর বলেন, ‘ইলিয়াস আলী মোল্লার মাধ্যমে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি নির্দেশ দিলে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা গত ২০ নভেম্বর ওই মেলার উদ্বোধন করেন। এবার মেলা চলবে প্রায় দেড়  মাস। হিসাব করে দেখা গেছে, এই মেলা থেকে আয় হবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা; যা ইলিয়াস মোল্লা গঠিত মেলা কর্তৃপক্ষ আদায় করবে। আর এই মেলার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন সাংসদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জিন্নাত আলী মাতব্বর, মো. ওবায়েদসহ পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেলা উপলক্ষে ৪১টি স্টলে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। পাশাপাশি শিশুদের জন্য রাখা আছে নাগরদোলা, ট্রেন ও ঘূর্ণি যান। সকালে স্কুলে ক্লাস চলার সময় এগুলো চালু থাকে। স্টলগুলোতেও বেচা-কেনা শুরু হয়। তাই ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলেই মেলার মাঠে চলে যায়। সেখানে কেউ চড়ে নাগরদোলায়, কেউবা ঘুরে দেখে স্টল। বন্দুক হাতে নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে বেলুন ফুটাতেও দেখা গেছে। এলাকাবাসীর কয়েকজনের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর মেলায় বখাটেদের উত্পাত বেড়ে যায়। ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে।
মো. আলিম নামের এক অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা ক্লাস করে না। মাত্র দুই-তিনজন ছাড়া সবাই চলে গেছে মেলার মাঠে। পরীক্ষার সময়, তাই স্কুলে না এসেও উপায় নেই।’ ছাত্রছাত্রীদের বাধা দেওয়া উচিত মনে করলেও মেলার সম্পর্কে মন্তব্য করতে নারাজ স্কুলশিক্ষকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালীরা সাংসদের সঙ্গে এই মেলার আয়োজন করছেন। আমরা কথা বললে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়।’
স্কুল-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাধা দেওয়া তো দূরে থাক, উল্টো স্কুল ভবন থেকে পাইপ ব্যবহার করে পানি মেলার মাঠে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবারের রোজার ঈদের সময় পানি ছাড়াও স্কুল থেকে বিদ্যুত্ সংযোগ দেওয়া হয় মেলার স্টলগুলোতে। তবে এবার স্কুল থেকে নয়, তার দিয়ে বাইরে থেকে অবৈধ বিদ্যুত্ সংযোগ মেলায় দেওয়া হয়েছে।
দোকানিরা জানান, প্রায় ১০ বিঘা আয়তনের মেলার মাঠে বসানো হয়েছে ৩৫টি ছোট ও ছয়টি বড় স্টল। প্রতিটি ছোট স্টল বিক্রি করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকায়। আর বড়গুলোর মূল্য এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। নাগরদোলার মালিক আবদুল হান্নান জানান, এক মাসের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে তাঁরা দিয়েছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
সেনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মেলা আয়োজনে অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিরীন আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু এবার নয়, ২০১২ সালে আমরা মেলাটি বন্ধ করেছিলাম। গত বছর (২০১৩ সাল) আমাদের না জানিয়ে মেলা হয়। এবার বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.