অপহরণ থেকে গুম পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা দিলেন র‌্যাব সদস্য নুরুজ্জামান

(গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি নিহত জাহাঙ্গীর ও স্বপনের পরিবারের খোঁজ খবর নেন। এ সময় তিনি জাহাঙ্গীরের মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করেন) নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার মামলায় রিমান্ডে থাকা র‌্যাব সদস্য নুরুজ্জামান (৩৫) দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি র‌্যাব-১১তে কর্মরত ছিলেন। পরে তার নিজ বাহিনী সেনাবাহিনীতে তাকে ফিরিয়ে নেয়ার পর স্বেচ্ছায় তিনি অবসরে  গিয়ে পলাতক থাকেন। বুধবার দুপুর সোয়া ১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাগুরার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নুরুজ্জামান মাগুরা সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে। মঙ্গলবার পুলিশ তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়। জবানবন্দিতে তিনি সাতজনকে অপহরণ থেকে শুরু করে লাশ গুম পর্যন্ত পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন আদালতে। এবং ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্তার পাশাপাশি জড়িত সকলের নামও বলেছেন। জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও চন্দন সরকার মেয়ের জামাতা বিজয় কুমার পালের দায়ের করা দুটি মামলায়ই তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন নুরুজ্জামান।
 সেভেন মার্ডার মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে জানান, স্বীকারোক্তিতে নুরুজ্জামান নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এবং সাতজনকে অপহরণ করে গাড়িতে তোলা, হত্যা ও পরে লাশ গুম করার সময় লাশের শরীরে ইট বাঁধার সময় তিনি নৌকায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাতজনকে অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যা ও লাশ গুম পর্যন্ত কারা কীভাবে জড়িত তারও বর্ণনা দিয়েছেন নুরুজ্জামান। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন আরো জানান, ইতিপূর্বে এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে যারা জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের জবানবন্দিতে নুরুজ্জামানের নাম আসে।
৭ খুনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ ম-ল জানান, মঙ্গলবার দিনগত রাত ৭ টার দিকে নুরুজ্জামানকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে মাগুরা সদর থানা পুলিশ। পরে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবারই তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নুরুজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়।
মামলার তদন্ত সংস্থার সূত্রমতে, এ পর্যন্ত ১১ জন র‌্যাব সদস্যসহ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নুরুজ্জামানসহ ১২জন র‌্যাব সদস্য এবং নুর হোসেনের দুই সহযোগী মোট ১৪ জন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া অপহরণ ও খুনের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ৯জন র‌্যাব সদস্যসহ মোট ১৪ জন।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। পরে ৩০শে এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জনের ও ১লা মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.