শীতের পোশাকের বাজারে ক্রেতা কম by মির্জা মাহমুদ

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ আর সকাল-সন্ধ্যায় হিম শীতল ঠাণ্ডায় শীতের আগমনী স্পষ্ট হলেও এখনও জমে ওঠেনি রাজধানীর শীতের পোশাকের বাজার। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে বিক্রেতারা গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম। যদিও বা দু-একজন আসছেন তারা দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। রাজধানীর পাইকারি শীতের পোশাকের মার্কেট বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা গেছে  বিক্রেতারা থরে থরে শীতের পোশাক সোয়েটার, জ্যাকেট সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না। বঙ্গবাজারের শিশু মেলা দোকানের বিক্রয়কর্মী হাবিব জানালেন, তারা সাধারণত পাইকারিভাবে শিশুদের শীতের পোশাক বিক্রি করে থাকেন। শীত আসার আগেই মূলত তাদের বিক্রি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ পেরিয়ে গেলেও সেই অর্থে ক্রেতার দেখা নেই। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, এখনও ঝাঁকিয়ে শীত না পড়ায় বেচা-বিক্রি কম। আর আগে রাজধানীতে বঙ্গবাজারই ছিল শীতের কাপড় বিক্রির একমাত্র পাইকারি মার্কেট কিন্তু এখন আরও পাইকারি মার্কেট গড়ে না ওঠায় বিক্রি কম। হাবিব জানান, তারা প্রতিটি শিশুদের সোয়েটার মান ও আকার ভেদে ৭০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। জান্নাত ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের বিক্রি একেবারই নেই। অন্য সময়ে শীতের এই মওসুমে দম ফেলার সুযোগ পেতেন না; আর এখন বেকার বসে আছেন। জাহাঙ্গীর আরও জানান, তারা সোয়েটারের মান ও আকার ভেদে ১৮০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। সিরাজগঞ্জ থেকে আসা সোয়েটারের পাইকারি ক্রেতা সবুজ মিয়া জানান, এত দূর থেকে এসেও তিনি মাত্র ২৫০ পিস সোয়েটার নিয়ে যাচ্ছেন। সোয়েটারের এই লাভ থেকে যাতায়াতের ভাড়াই উঠবে না; তবুও বিক্রির আশায় নিয়ে যাচ্ছেন। ভাই ভাই গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী মো. আলমগীর। তিনি জানান, অন্য সবার মতো তাদেরও বিক্রি কম। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি বাড়ার আশা তার। আলমগীর আরও জানান, জ্যাকেটের মান ও আকার ভেদে তারা প্রতিটি জ্যাকেট পাইকারি ১১০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। অপর জ্যাকেট বিক্রেতা মনিরুল জানান, মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নেই। খাওয়া-পরার পর বাড়তি টাকা থাকলেই মানুষ শীতের পোশাক কিনবে। বঙ্গবাজারের পাশে এনেক্স টাওয়ার মার্কেটেও একই অবস্থা। এই মার্কেটটি মূলত দেশী-বিদেশী কম্বলের জন্য বিখ্যাত।
বিক্রেতারা রঙ-বেরঙের বাহারি কম্বল দিয়ে বসলেও ক্রেতা নেই মার্কেটে। রিয়া ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী মো. কাওসার জানান, তাদের কাছে বিভিন্ন রকমের কম্বল আছে। এগুলো বেশির ভাগই চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া থেকে আমদানি করা। তিনি জানান, ডাবল আকারের প্রতিটি কম্বলের দাম পড়বে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা আর সিঙ্গেল আকারের প্রতিটি কম্বলের দাম পড়বে ২২০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকার মতো।
হাবিব কালেকশনের সুজন জানান, তারা শুধু দেশী পাতলা কম্বল বিক্রি করেন। প্রতিটি কম্বল তারা ১৩০ টাকায় বিক্রি করেন। আর এর চেয়েও পাতলা কম্বল পাইকারি বিক্রি করেন ৯৮ টাকা করে। সুজন জানান, শীত বাড়লে ত্রাণ হিসেবে দেয়ার জন্য পাতলা কম্বলের চাহিদা বাড়বে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট সংলগ্ন ফুটপাতেও চলছে শীতের পোশাকের বেচাকেনা। এখানেও পাওয়া যাচ্ছে মাফলার, কানটুপি, মোজা থেকে শুরু করে সোয়েটার, ব্লেজার, কম্বলসহ শীত নিবারণের যাবতীয় উপকরণ। এখানকার বিক্রেতারা জানান, তাদের বেচা-বিক্রি মোটামুটি তবে শীত বাড়বে বেচা-বিক্রি বাড়বে- এ আশা তাদের। বায়তুল মোকাররম উত্তরগেট সংলগ্ন ফুটপাতে কম্বল বিক্রি করছিলেন মো. জামাল মিয়া। তিনি জানান, তার এখানে আকার ও মানভেদে ২৫০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকা দামের কম্বল পাওয়া যায়। আর পাতলা দেশী কম্বল পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। এখন দিনে ৮ থেকে ১০টা কম্বল বিক্রি হয় বলে তিনি জানান, শীত বাড়লে বিক্রি বাড়বে বলে আশা তার। সোয়েটার বিক্রেতা মীর হোসেন জানান, তারা দেশী প্রতিটি সোয়েটার বিক্রি করেছেন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা আর চীনের তৈরি প্রতিটি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৮০০ টাকায়।
বাচ্চাদের বাহারি রঙ ও ডিজাইনের সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যে। আর মাফলার বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে ২শ’ টাকার মধ্যে।
ঢাকা কলেজের দুই ছাত্র সোহাগ আর মিলন ব্লেজার দরদাম করছিলেন। তারা জানান, ব্লেজার পছন্দ হলেও বিক্রেতা দাম ছাড়ছেন না। বিক্রেতা রাসেল জানালেন, তারা প্রতিটি ব্লেজার মান ও আকার ভেদে  ১২শ’ থেকে ২২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। এখন ব্লেজারের দাম কম থাকলেও শীত বাড়লে দামও বাড়বে বলে তিনি জানান। আর এসব ব্লেজার তৈরি হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি থাকলেও একেবারেই মাথায় হাত পলওয়েল আর জোনাকী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের।
পলওয়েল মার্কেটের জেকে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুর রহমান জানান, আমরা ব্যবসায়ীরা সবসময়ই বলি ব্যবসা ভাল না কিন্তু এবার ‘ব্যবসা ভাল না’র মধ্যে ভাল না। এই অবস্থা চলতে থাকলে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দেবে বলে তিনি জানান।
কারণ, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বিদুৎ বিল দিয়ে আর পোষানো যাচ্ছে না। সিদ্দিক জানান, তার দোকানে মান ও আকারভেদে জ্যাকেট ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা আর সোয়েটার ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জোনাকী সুপার মার্কেটের বিক্রয়কর্মী মামুন নিজের হাতের ঘড়ি দেখিয়ে বলেন, আড়াইটা বাজে এখন পর্যন্ত বউনি করতে পারি নি। ব্যবসাপাতির অবস্থা খুব খারাপ।

No comments

Powered by Blogger.