১৫০ বিদেশীর লেনদেনের তথ্য খুঁজছে গোয়েন্দারা

এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অনুরোধে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশী নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তথ্য খুঁজছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দারা। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) চলতি বছর ব্যাংকগুলোর কাছে কমপক্ষে দেড়শ বিদেশী নাগরিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে। বিএফআইইউ সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন, নগদ লেনদেন, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে থাকে।
বিএফআইইউর উপ-প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। এছাড়া আমরা (বিএফআইইউ) এগমন্ট গ্র“পেরও সদস্য। এদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করি। এর অংশ হিসেবেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ ১০ নভেম্বর বিএফআইইউ ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে বাহরাইনের তিন নাগরিকের হিসাবের তথ্য চেয়েছে। তারা হলেন- এসাম ইউসুফ জাহানী, ইমাদ ওমর আলনেসনাস ও ওমাইমা ওথমান আলমাহমুদ। তাদের পাসপোর্ট নম্বর ও জন্মস্থানও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ৫ নভেম্বর শিনিচি মিতাতে নামের এক জাপানি নাগরিকের তথ্য চাওয়া হয় ব্যাংকগুলোর কাছে, যার পাসপোর্ট নম্বর টিএইচ ৯৪৭০৪৭৬, জন্মতারিখ ১৯৭৯ সালের ১৬ মার্চ। দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ৩ জন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পাসপোর্টধারী দুজনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে ১৮ আগস্ট ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। তার আগে জুন মাসে চাওয়া হয় কাজাকস্তানের প্রতিষ্ঠান জর্জেন হাউজ-এর হিসাবের তথ্য। ওই চিঠিতেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফাস্টিন ট্যুরিজম, অস্ট্রিয়ার মেরিডিয়ান জেট ম্যানেজমেন্ট, রাশিয়ার এমএস গ্র“প ইনভেস্টমেন্ট নামের তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাব বা লেনদেনের তথ্য আছে কিনা জানতে চাওয়া হয় ব্যাংকগুলোর কাছে। এছাড়া উজবেকিস্তান, ইসরাইল, থাইল্যান্ড ও রাশিয়ার কয়েকজন নাগরিকের বিষয়েও তথ্য চান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দারা।
বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানান, জুনের ওই চিঠিতে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চাওয়া হয়েছে তারা আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র ব্রাদার্স সার্কেল-এর সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ সালে এই চক্রকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের সব ধরনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোতে উৎপত্তি হলেও এই চক্র সারা বিশ্বেই মাদক পাচারসহ আর্থিক খাতের নানা অপরাধের জাল বিছিয়েছে। এর আগে গত বছরের শেষদিকেও ব্রাদার্স সার্কেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সন্দেহভাজন ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। একই ধরনের অনুরোধে চলতি বছর ৩ এপ্রিল এক চিঠিতে ইউক্রেনের ৩৩ জনের তালিকা পাঠিয়ে তথ্য চায় বিএফআইইউ। ১০ এপ্রিল আর্জেন্টিনার ২১ নাগরিকের আর্থিক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়।
জানুয়ারিতে এক চিঠিতে বিভিন্ন দেশের ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। এদের মধ্যে ২৬ জন মূল সন্দেহভাজন। বাকিরা তদের স্ত্রী বা সন্তান। ভারত, ফিলিপিন্স ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন নাগরিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে চলতি বছর। এছাড়া গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী দুই বাংলাদেশী নাগরিকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়।
বিএফআইইউর মাহফুজুর রহমান বলছেন, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে করা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও দেশের আইনের বিধি মেনেই তারা ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ বা বিনিময় করেন। তবে এসব সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো হিসাব বা লেনদেনের খোঁজ পাওয়া গেছে কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। ২০০২ সালের জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিভাগ হিসাবে যাত্রা শুরু করে বিএফআইইউ। সে সময় এর নাম ছিল এন্টি মানি লন্ডারিং ডিপার্টমেন্ট। এর দশ বছর পর ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি এই বিভাগকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে রূপান্তর করা হয়।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে বিএফআইইউ আর্থিক গোয়েন্দা কার্যক্রমের আন্তর্জাতিক সংগঠন এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হয়। বিশ্বের ১৪০টি দেশ এই সংগঠনের সদস্য। এর বাইরেও ২০টি দেশের সঙ্গে আর্থিক তথ্য আদান-প্রদানের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের।

No comments

Powered by Blogger.