নামসর্বস্ব ২৯ সমিতির নামে ২৬৭ বিঘা সরকারি জমি

সরকারের ২৬৭ বিঘা জমি লিজ দেয়া হয়েছে ঢাকার নামসর্বস্ব ২৯ সমবায় সমিতিকে। ১৭ শর্তে দেয়া এসব জমির কোনোটিই এখন আর শর্তের আওতায় নেই। প্রাতিষ্ঠানিক প্লট হিসেবে বরাদ্দ নিয়ে প্লটগুলো ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর হয়েছে কয়েক দফা। কোনটিতে গড়ে উঠেছে ভবন, ফ্ল্যাট। ব্যক্তি নিয়ন্ত্রিত বাজারও বসেছে কোনোটিতে। নিু আয়ের মানুষদের কথা বলে বরাদ্দ নেয়া প্লট নিয়ে চলছে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য। এতে রয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও সমবায় অধিদফতরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় চাইলেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসক এই মর্মে একটি আদেশ (পত্র নং-৬৫০১/৩/হাউজিং/এসএল-২/১১১২) জারি করেন যে, 'Government shall not acquire any land for any Co-oparative Society nor shall it lease any khas land to any such society.' অর্থাৎ সরকার কোনো সমবায় সমিতির জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না কিংবা এ ধরনের কোনো সংঘকে লিজ প্রদান করবে না। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৫ সালের ১৬ ফেব্র“য়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তার অধীনস্থ সমবায় সমিতি নিবন্ধককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি (স্মারক নং-এস-১/১২৫-৩২/৮৫/৫৫) দেয়। সরকারি আদেশ অনুসারে কয়েক বছর সমবায় সমিতিকে সরকারি জমি লিজ বরাদ্দ বন্ধও ছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালের ২৮ জুলাই কুমিল্লা সমবায় সমিতিকে ৩১৬ বর্গফুট সরকারি জমি লিজ বরাদ্দ (নং-৩৭৪৯) দিয়ে এ আদেশ লংঘন করে তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরে ১৯৯৩ সালে ‘জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা’ প্রণয়ন করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। নীতিমালার ৫, ৭ ও ১২ বিধিতে বলা হয়, সমাজের নিু, মধ্য এবং উচ্চ আয়ভুক্ত সব শ্রেণীর মানুষের গৃহনির্মাণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বেসরকারি গৃহনির্মাণ সংস্থা এবং সমবায় সমিতিগুলোর কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের ‘বাজারদর’ অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থান বা শহরের কেন্দ্রস্থলে সরকারি জমি বরাদ্দ করতে হবে, যাতে তারা আগ্রহী ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। ১৯৮৪ সালের সরকারি সিদ্ধান্ত ও আদেশের পরিপন্থী এ নীতিমালার আওতায় ১৯৯৩ সাল থেকে পুরোদমে সমবায় সমিতিকে কম মূল্যে সরকারি জমি লিজ বরাদ্দ শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় জমি বরাদ্দের নামে হরিলুট। পানির দামে দেয়া হয় লিজ বরাদ্দ।
সূত্র মতে, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কথা বলে বিঘাপ্রতি মাত্র ১৬ লাখ টাকা দরে সমবায় সমিতিগুলোকে বরাদ্দ প্রদান শুরু করে তৎকালীন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। পরে ২০ লাখ টাকা বিঘা দরে কয়েকটি সমিতিকে বরাদ্দ দেয়। অথচ সে সময় সাবরেজিস্ট্রি অফিস নির্ধারিত জমির মূল্য (বাজারদর) ছিল প্রতি বিঘা ৬০ লাখ টাকা। এ হারে ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ২৪০ দশমিক ১০১১ বিঘা জমি লিজ বরাদ্দ দেয়া হয় বিভিন্ন সমবায় সমিতিকে। ২০০১ সালে ২৬ দশমিক ৬৬ বিঘা জমি লিজ বরাদ্দ দেয়া হয় কয়েকটি সমবায়কে। দলিলে এসব জমির মূল্য ধরা হয় বিঘাপ্রতি ২ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বাজারদরের চেয়ে অনেক কম। তৎকালীন সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অসদুদ্দেশ্য হাসিল, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিস্বার্থ এবং সমিতির নামে সরকারি জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে দেয়াই লিজ বরাদ্দের উদ্দেশ্য ছিল বলে জানায় সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, সরকারি জমির জন্য আবেদনকারী সমিতিগুলোর অধিকাংশই ছিল নামসর্বস্ব। শুধু সরকারি জমি গ্রাস করার লক্ষ্যেই এগুলোর জন্ম। কোনো যাচাই-বাছাই কিংবা মানদণ্ড বিচার না করেই গণহারে দেয়া হয়েছে লিজ বরাদ্দ। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, নিু আয়ের মানুষ এগুলোর কোনো কার্যক্রমেই নেই। সমিতির কার্যকরী কমিটিতে দরিদ্র, নিু আয়ের ব্যক্তিদের রাখা হলেও প্রকৃত পরিচয় গোপন করে সদস্য হিসেবে রয়েছেন রাজনীতিক, পেশাজীবী নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা। দলিলে এক ধরনের মূল্য উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত লেনদেন হয়েছে অনেক বেশি অর্থ।
২০০৮ সালে গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটি (এনসিসি) এবং দুদক কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত টাস্কফোর্সের অনুসন্ধানে সরকারি জমি হরিলুটের এ বিষয়টি বেরিয়ে আসে। দুদকের একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের এ টাস্কফোর্সে ছিলেন মেজর মাসুম এবং সহকারী পুলিশ সুপার মুনির।
টাস্কফোর্সের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ১৯৯২ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিধিবহির্ভূতভাবে, নামমাত্র মূল্যে অন্তত ২৯টি সমবায় সমিতিকে সরকারি জমি লিজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সমিতিগুলো হচ্ছে- মোহাম্মদীয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. (২০.০৫ কাঠা), রূপনগর গভ. হাউজিং এস্টেট বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (০.৭৬ বিঘা), মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কল্যাণ সমিতি (১৬ একর), পল্লবী থানা মুক্তিযোদ্ধা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৯০৩.৫৫ বর্গগজ), ঝালাই ও কর্মকার বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৫ কাঠা), কুমিল্লা সমবায় সমিতি (৩১৬ বর্গগজ), বৃহত্তম ময়মনসিংহ সমিতি লি. (৫ কাঠা), রূপসী বাংলা সমবায় সমিতি (২ একর), যমুনা বহুমুখী সমবায় সমিতি (৫ একর), মুক্ত বাংলা বহুমুখী কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. (২৯৮৯.২২ বর্গগজ), রূপনগর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি. (২.৫০ বিঘা), মুসলিম বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৫.১৭ বিঘা), গরীবে নেওয়াজ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (১.৩০ একর), ঢাকা সাংবাদিক সমিতি লি. (৭ একর), নিউ ঢাকা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (১.১৭ একর), সেক্রেটারি ১নং মুক্তিযোদ্ধা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৫.২১ কাঠা), ছিন্নমূল বণিক সমবায় সমিতি লি. (১১৩৯.৫৫ বর্গগজ), রজনীগন্ধা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (২ বিঘা), আমানত বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৩.১৩ একর), উত্তরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. ৩.১৩ একর), রূপসী বাংলা সমবায় সমিতি লি. (৪.০০ একর), মিরপুর ভাই ভাই ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি (৯০৩.৫৫ বর্গগজ), কামাল আহমেদ মজুমদার স্কুল অ্যান্ড কলেজ (৪৭.৭৬ কাঠা), সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৬৬৬৬.৬৬ বর্গগজ), রূপনগর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৩২০৯.৪৪ বর্গগজ), পল্লবী থানা মহিলা পুনর্বাসন বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৯০৩.৫৫ বর্গগজ), মিরপুর ৪নং ওয়ার্ড মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (৪২৯৮.৮১ বর্গগজ), চাকুরিজীবী সিরাজগঞ্জ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. (১.৬৫ একর) এবং গৃহসংস্থা পরিদপ্তর কল্যাণ সমিতি লি. (১৫৯৯.৩০ বর্গগজ)। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (সেটেলমেন্ট) ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী, সহকারী পরিচালক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী, উপপরিচালক আজহারুল হক এবং নূরুল আলমের স্বাক্ষরে এসব বরাদ্দ হয়।
মিরপুর এলাকার ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন নেয়া কয়েকটি সমিতি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, তাদের বর্তমানে তেমন কার্যক্রম নেই। বরং সমিতির নামে পাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক প্লটের বাণিজ্যিক ব্যবহার, অর্থ লোপাট ও সদস্যদের শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কয়েক হাত বদল হয়ে এগুলোতে গড়ে উঠেছে বাসাবাড়ি, বাণিজ্যিক স্থাপনা।
সরকারি প্লট বরাদ্দ পাওয়া ‘রূপনগর গভ. হাউজিং এস্টেট সমিতি’ পরিদর্শনে দেখা যায়, রূপনগর আবাসিক এলাকার রোড নং-৩০, প্লট নং-২৫ এর ঠিকানায় সমিতির কোনো অস্তিত্ব নেই। বরাদ্দ পাওয়া ০.৭৬ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ‘গৃহকোণ’ নামক চারতলা ভবন। মধ্যবয়স্কা বাসিন্দা আমেনা খাতুন জানালেন, বায়িং হাউস ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের তৌহিদুল আলম ভবনের মালিক। তিনি তার স্ত্রী মহসিনা আলমকে হেবা করেছেন। তারই ভায়রা ভাই গোলাম মোস্তফা বাড়িটি দেখাশোনা করেন। ২৯ নম্বর রোডের পুরনো বাসিন্দা আবদুল লতিফ হাওলাদার ওরফে লতিফ মাস্টার বলেন, ‘এখানে রূপনগর গভ. হাউজিং এস্টেট বহুমুখী সমবায় সমিতি’ নামে কখনও কোনো সংগঠন ছিল না।
মিরপুর-এ সংলগ্ন রোড নম্বর ৬ ও ৮ নম্বরে ‘গরীবে নেওয়াজ বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.’ পরিদর্শনে দেখা যায়, ১.৩০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অন্তত ৩০টি আবাসিক ভবন। ৬৪ জনের অধিকাংশই সদস্যপদ ৫ থেকে ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে বিরোধ। বর্তমান সভাপতি মহসিন খান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রবের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি এ সম্পত্তিকে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। অধিকাংশ সদস্যের মতামত উপেক্ষা করে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও করেছেন তারা, যা বরাদ্দ শর্তের সুস্পষ্ট লংঘন। অপর অংশের নেতৃত্বে থাকা ফিরোজ অভিযোগ করেন, বর্তমান কমিটি অবৈধ। তারা গরিব সদস্যদের সহায়টুকু কৌশলে গ্রাস করতে চান।
প্লট বরাদ্দে আগে নিু আয়ের মানুষদের ২ টাকা ও ৫ টাকা চাঁদায় পরিচালিত হতো গরীবে নেওয়াজ সমবায় সমিতি লি.। কিন্তু বরাদ্দের পর অধিকাংশ সদস্যই সদস্যপদ উচ্চমূল্যে বিক্রি করে দেন। ৬৪ সদস্যের মধ্যে ৪০ সদস্যই নতুন। জমি হস্তান্তর অবৈধ হলেও তারা ২০ থেকে ৬০ লাখ টাকায় কিনেছেন সদস্যপদ।
মিরপুর পল্লবী প্রধান সড়কের পাশেই চোখে পড়ে ‘সোনার বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি’র সাইনবোর্ড। একতলা ভবনের ওপর টিনশেড অফিস। লোহার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গেলেই বোঝা যায়, এখানে জনমানুষের পা পড়েনি বহুদিন। দরজাটায় জং ধরা তালা। সাইনবোর্ডে রেজিস্টার্ড নম্বর (১৮৫/৯৬) সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের ফোন নম্বর দেয়া থাকলেও নম্বর দুটি অকেজো। বরাদ্দ পাওয়া জায়গায় দেখা মেলে লোহালক্কড়। বোঝা যায়, এখানে কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কথা বলার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি এ সমিতিতে।
রূপনগরে ১-এইচ/৩-৯ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেয়া হয় ‘ঝালাই ও কর্মকার বহুমুখী সমবায় সমিতি লি.’কে। ৫ কাঠার এ প্লটটিতে স্থাপন করা হয়েছে কাঁচাবাজার। বর্তমান সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আরমান খানের পুত্র মামুন। বাজারটির এক দোকানে সমিতির খুলে রাখা সাইনবোর্ড। তবে অফিসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রানা হোসেন নামে সমিতির এক সদস্য এগিয়ে এলেও তিনি কথা বলতে চাননি। জানালেন, সভাপতির সঙ্গে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করলেও তার কাছে আক্তার হোসেনের কোনো নম্বর নেই। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
রূপনগরের ৮৫/৮৬ নম্বর প্লটের ঠিকানায় অবস্থিত ‘রূপসী বাংলা বহুমুখী সমবায় সমিতি’কে ৪ একর জায়গা বরাদ্দ দিলেও এখন এ সমিতির কোনো অস্তিত্ব নেই। স্থানীয়রা জানান, বহু আগেই সমিতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এমএস কামাল জানান, বরাদ্দ দেয়া জমির দখল তারা বুঝে পাননি। জমিটি এখন স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দখলে।
দুদক সূত্র জানায়, প্যাডসর্বস্ব সমিতির নামে স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ প্রদানকে ১৯৮৪ সালের সরকারি আদেশ ও ১৯৯৩ সালে প্রণীত ‘জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা পরিপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। এসব লিজ বরাদ্দ বাতিল এবং আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীকালে কোনো সরকারই এ সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। দুদকও এ নিয়ে আর এগোয়নি। তবে সম্প্রতি সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরসহ সংশ্লিষ্ট চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সমিতির নামে সরকারি জমি হরিলুটের বিষয়টি আবারও সামনে আসে।
সূত্র মতে, ২৯ সমবায় সমিতির নামে লিজ বরাদ্দ দেয়া ২৬৭ বিঘা সরকারি জমি মূলত হাতছাড়া হয়ে গেছে। সমিতির জন্য কোনো জমি অধিগ্রহণ কিংবা খাস জমি লিজ প্রদান করা হবে না- মর্মে সরকারি সিদ্ধান্ত থাকলেও ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সমিতির নামে জমি হাতিয়ে নেয়া হয়। এতে বরাদ্দকালীন হিসাব অনুযায়ী সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ১৩৭ কোটি টাকা। বর্তমান হিসেবে যা ৫শ’ কোটি টাকারও বেশি। ১৭টি শর্তে বরাদ্দ দেয়া এসব প্লটের বর্তমান ব্যবহারকারীরা শর্ত ভঙ্গ করলেও বাতিল হয়নি কোনো বরাদ্দ।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের বিষয়ে দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে- জানতে চাইলে কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট হয়ে থাকলে দুদক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। যদি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অবৈধ অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে সেটি দুদকেরই সিডিউলভুক্ত অফেন্স। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু পেলে দুদক কাজ শুরু করবে।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘অনেক অবৈধ কাজই পরে বৈধ হয়ে যায়। এ কারণে মন্ত্রণালয় চাইলেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বনানীতে মির্জা আব্বাসরা নিজের দলীয় এমপি-মন্ত্রী-ব্যবসায়ীদের অবৈধভাবে প্লট দিয়েছেন। আমরা সেগুলো স্টপ করলাম। পরে তারা আবার ক্ষমতায় এসে কলমের এক খোঁচায় বৈধ করে নিয়েছে। আমার কাছে বহু সমবায় সমিতি অনুরোধ করেছে বরাদ্দ চেয়ে। আমি কাউকে বরাদ্দ দেইনি। কারণ আমি জানি, অধিকাংশ সমিতিই ভুয়া।’ মন্ত্রী বলেন, ‘অন্যায়-দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত হওয়া দরকার। সরকার তো একটি চলমান বিষয়। সরকার পরিবর্তন হলে সব পরিবর্তন হয়ে যাবে- এটি ঠিক নয়।’

No comments

Powered by Blogger.