আল বাগদাদির খেলাফত by ড. মাহফুজ পারভেজ

সারা আরবে এখন উচ্চকিত  স্লোগান: ‘জমহুরিয়াত মা আল ইসলাম’ অর্থাৎ ইসলাম ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকার ও শাসন চাই। আরব বসন্তের উপসংহারহীন দুঃখজনক পরিসমাপ্তির পর মধ্যপ্রাচ্যের রক্তাক্ত রাজনৈতিক রণাঙ্গনে উড়ছে প্যান-ইসলামিক খেলাফতের সবুজ পতাকা। ইসলামের নামে শেষ খেলাফত তুরস্কের উসমানিয়াদের পতনের এক শ’ বছর পর ইরাকের খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি উড়িয়েছেন সেই ঝাণ্ডা। তাঁর ডাকে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে উন্মাতাল তাবৎ আরব দুনিয়া। খেলাফতের পক্ষে ও বিপক্ষে বিভক্ত আরব জনমত ও রাষ্ট্রসমূহ। ইরাকের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমের ৮০০ কিলোমিটারব্যাপী সীমান্তে ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে উদ্বিগ্ন সৌদি আরব। সৌদি বাদশাহ এতটাই রুষ্ট যে, তিনি তাঁর সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে কঠিনতম পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। জর্ডান থেকে সালাফি নেতা আবু মুহম্মদ আল মাকসুদি সৌদি সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। খেলাফতপন্থি, প্যান-ইসলামিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘হিযবুত তাহ্‌রির’ কটাক্ষ করে বলেছে, ‘আবুবকর আল বাগদাদিকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার এ অধিকার দিয়েছে কে? তাঁর ঘোষণা শূন্য কলসির আওয়াজ মাত্র।’ খেলাফতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ইরানও। ইরাকি উপজাতির স্বঘোষিত খলিফাকে দমনের জন্য সামরিক শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। প্রবল বিরোধিতার পরেও পরিস্থিতির অনেকটুকুই নিয়ন্ত্রণ করছেন আল বাগদাদি। ফলে এখন সবার সামনে একটিই প্রশ্ন: কে এই খলিফা বাগদাদি আর কেমন তাঁর খেলাফত?

খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি মূলত একজন আরব কবি। বয়স ৪৩। শক্তপোক্ত, ভারিক্কি চেহারার দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ। জন্ম ১৯৭১ সালে ইরাকের সামারায় এক সাধারণ আরব উপজাতি পরিবারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশোনা নিজের শহরে। তারপর আরবি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা বাগদাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকেই ধর্মশাস্ত্রে পিএইচডি। স্বল্পভাষী, আপাত শান্ত বাগদাদি ২০০৩ সাল পর্যন্ত নিজের শহরেই তাঁর দিনযাপন সীমাবদ্ধ রাখেন। মসজিদের ইমাম পদে থেকে ধর্মকর্ম ও সাংসারিক কাজেই ব্যস্ত থাকেন। ছিলেন জাতীয়তাবাদী-জনপ্রিয়-স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের ভক্ত; কিন্তু কখনওই তাঁর অন্ধ-অনুসারী হন নি। অবসর সময়ে কবিতা রচনা করতেন। শব্দচয়ন ও কবিতার ভাষা ছিল পুরোদস্তুর আধুনিক। যদিও বাগদাদির কবিতার প্রতীক, বাকপ্রতিমা, উপমা ইসলামি ঐতিহ্য ও পুরাণঘেঁষা।
প্রসঙ্গত স্মরণ করতে হবে তৎকালীন ইরাকের চরম অনিশ্চিত ও আক্রান্ত রাজনৈতিক ইতিহাসের কথাও। ২০০৩ সালের ১৩ই ডিসেম্বর। গভীর সুড়ঙ্গে ধরা পড়ে গেলেন সাদ্দাম হোসেন। নবগঠিত সরকার তাঁর বিচার শুরু করলো ৩০শে জুন, ২০০৪। আড়াই বছরের প্রহসন বিচারের পর ২০০৬ সালের ৩০শে ডিসেম্বর ফাঁসি হয় সাদ্দামের। দণ্ডাদেশের আগে, আদালতে দাঁড়িয়ে অগ্নিবর্ষী আরবিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে জাতির উদ্দেশে এবং আরবদের লক্ষ্য করে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন, সে ভাষণের বয়ান এখনও বহু আরবের কানে বাজছে: ‘... আমি কোন অন্যায় করি নি। যা করেছি সবই দেশের জন্য, জাতির জন্য। মৃত্যুকে ভয় করি না। নিজেকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিচ্ছি। আমি যখন থাকবো না, তখনো আমার জাতি, আমার ইরাকি জনগণ, আমার আরব ভাইয়েরা মুক্তির জন্য ধর্মযুদ্ধ/জিহাদ চালিয়ে যাবে।’
অবাক হওয়ার মতোই চমকপ্রদ আরেক ঘটনা হলো, সেই ২০০৬ সাল থেকেই বদলে যেতে শুরু করলেন তরুণ আরব কবি আবুবকর আল বাগদাদি। নিজের এলাকা ছেড়ে ঘুরে বেড়ালেন দেশের নানা প্রান্তর। তারপর ফালুজায় এসে জড়ো করলেন ১০০ সশস্ত্র আরব তরুণকে। তখনও তিনি অপরিচিত। তাঁর সশস্ত্র তৎপরতা সাদ্দাম-পরবর্তী ইরাকের সাধারণ প্রতিরোধের প্রচেষ্টার বাইরের কোন বিষয় হিসেবে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার গুরুত্ব কেউ অনুভব করেন নি। কিন্তু বাগদাদি সেখানেই থেমে থাকেন নি। বারবার নাম বদল করে, নানা বেশে ও ছদ্মবেশে, ইরাক, সিরিয়ার নানা প্রান্তে ঘুরে ঘুরে মিলিশিয়া সংগ্রহ করতে লাগলেন। তখনও ‘ক্যাম্প বুক্কা’ তাঁর অন্যতম ঠিকানা। মার্কিন সেনা কমান্ডার কর্নেল ক্যান কিং প্রচলিত অভিযান চালিয়ে পশ্চিমাবিরোধী অনেকের সঙ্গে বাগদাদিকে গ্রেপ্তার ও ‘ক্যাম্প বুক্কা’ ধ্বংস করেন। বাগদাদির জীবনে শুরু হয় প্রায় চার বছরের মতো সময় মার্কিন কারাগারে থাকার কষ্টকর অধ্যায়।
২০০৯ সালে মার্কিন দখলদার বাহিনীর গোপন সেলে আটক বাগদাদিকে ইরাকের পশ্চিমানুগত প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে তিনি গর্জে ওঠেন: ‘আমি তোমাদের দেখে নেবো- প্রতিশোধ নেবো নিউ ইয়র্কে।’ রেকর্ড হিসেবে কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ রাখা হলেও বাগদাদির হুমকিকে গুরুত্ব দেয় নি মার্কিন প্রশাসন কিংবা ইরাকের নূর আল মালিকির সরকার। এরই মধ্যে রুশ-ইরাক চুক্তি অনুসারে অন্যান্য কিছু বন্দির সঙ্গে মুক্তি পেলেন বাগদাদি। অবশ্য এ সময় আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, নাম তাঁর আবু ওমর আল বাগদাদি, যিনি আল-কায়েদার ঘনিষ্ঠজন ও গেরিলাযুদ্ধের দক্ষ নেতা। তাঁর কাছেই আবুবকর আল বাগদাদি নিয়েছিলেন অস্ত্র প্রশিক্ষণ আর শিখেছিলেন গেরিলা পদ্ধতিতে প্রতিরোধযুদ্ধ কৌশল। তাঁর পরামর্শেই আল বাগদাদি গড়ে তোলেন সশস্ত্র যোদ্ধৃদল: লড়াকু ‘জাঁনেসাঁর’ বা জীবন-বাজি-রাখা বাহিনী। ওমরের মৃত্যুতে মরিয়া হয়ে উঠলেন আল বাগদাদি। কবিতার পুরুষ এবার হয়ে গেলেন ‘সিরিয়া-ইরাকি ইসলামী রাষ্ট্রে’র স্বঘোষিত খলিফা: সামরিক-অসামরিক সর্বেসর্বা।
১৬ই ডিসেম্বর ২০১০। ঘোষিত হলো প্রস্তাবিত রাষ্ট্রীয় কাঠামো আর মানচিত্র। সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যখন গণ-অভ্যুত্থান দেখা দেয়, যখন আরব বসন্ত ভস্ম আর মরুভূমিতে মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে অসংখ্য রাজনৈতিক কাঁটা ও বিঘ্ন, তখন হাতে শাণিত অস্ত্র আর কণ্ঠে ইসলামী রাষ্ট্র তথা খেলাফতের স্লোগান নিয়ে ইরাক থেকে, তুরস্কের উত্তরাঞ্চল থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা সিরিয়ায় প্রবেশ করে। আর তখনই নাম শোনা যায় ‘আইএসআইএস’-এর। আইএসআইএস একক কোন সংগঠন নয়। ক্ষুদ্র গ্রুপও নয়। বিভিন্ন যোদ্ধা ও বিপ্লবী গ্রুপের মোর্চা, পশ্চিমা দুনিয়ায় যাদের অনেককেই সন্ত্রাসবাদী বা জঙ্গিবাদী নামে চিহ্নিত করা হয়। এ জোট বা মোর্চাই এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল বাগদাদির নেতৃত্বে লড়ছে আরবের নানা প্রান্তে। লেবানন, ফিলিস্তিন, ইজরাইল, সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও সাইপ্রাসের একাংশ নিয়ে তারা বৃহত্তর ইসলামী খেলাফত-রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছে এবং এ জন্য সশস্ত্র যুদ্ধও শুরু করে দিয়েছে। সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো থেকে তাঁর দলে লোক যোগ দিচ্ছে বলে পশ্চিমা গোয়েন্দারা দাবি করেছে। যদিও গোয়েন্দারা লাদেন বা জাওয়াহিরির সঙ্গে সরাসরি আল বাগদাদির দেখা হওয়ার খবর দিতে পারে নি, তথাপি এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে, ২০১১ সালের ২রা মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন মেরিন সেনাকর্তৃক লাদেনকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গেই আরব সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে কবি ও বিপ্লবী আল বাগদাদি বলেছিলেন, ‘ভয়াবহ প্রতিশোধ শিগগিরই।’ ঠিক তিন দিন পর বাগদাদ শহরে গাড়িবোমায় মারা যায় ২৪ পুলিশ। ক্রমেই সেই প্রতিশোধ ছড়িয়ে পড়ে আরব জগৎময় আর দিনে দিনে সেটা বাড়তেও থাকে। তার পর আসে চলতি ২০১৪ সালের বহু আলোচিত ২৯শে জুন তারিখটি।
২৯শে জুন তারিখে দিনটি ছিল রোববার। রাজধানী বাগদাদ শহর থেকে ১০০ দূরে মসুলে প্রহরী রক্ষিত নিশ্ছিদ্র ক্যাম্প থেকে সপরিষদ বেরিয়ে এলেন আবুবকর আল বাগদাদি। হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। গায়ে ফৌজি পোশাক। মাথায় কালো পাগড়ি। মুখভর্তি কাঁচা-পাকা দাড়ি। তাঁরই মুখপাত্রের আহ্বানে হাজির দেশ-বিদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যমের শ’ শ’ প্রতিনিধি। সবার সামনে সামরীয় আরবি উপভাষিক উচ্চারণে আল বাগদাদির বয়ান শুনে চমকে উঠলেন সাংবাদিকরা। মাত্র কুড়ি মিনিটের ভাষণ বদলে দিলো মধ্যপ্রাচ্যের আরব জগতের রাজনৈতিক হিসাবপত্র। আবুবকর আল বাগদাদি ডাক দিলেন দেশবাসী ও বিশ্ববাসী উম্মাহ বা কওমকে। সম্বোধন করলেন ‘ইয়া আইয়ুহাল এরাক, ইয়া কওমি, ইয়া মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত’। তারপর বললেন, ‘ইরাকের বাসিন্দা, আমার জাতি, মুসলমান পুরুষ ও নারী, আমার অনুগামীগণ নিঃসঙ্কোচে আমার ওপর খলিফার দায়িত্ব অর্পণ করে জনপ্রতিনিধিত্বশীভাবে দেশ শাসনের অধিকার দিয়েছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। সবার, বিশেষ করে, মজলিসাতুস শূরার (উপদেষ্টামণ্ডলী) পক্ষ থেকে আমি খেলাফতে প্রত্যাবর্তন ঘোষণা করছি। ইরাকে বিস্তৃত অঞ্চল এখন আমাদের দখলে। সম্মুখে ‘ফাতহুন কারিব’ (চূড়ান্ত বিজয়)। অতএব, হাতে অস্ত্র নাও, মধ্য আফ্রিকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত আমাদের ওপর যে অন্যায়, যে অবিচার হয়েছে, প্রতিশোধ নিতে হবে। বিশ্বকে বুঝিয়ে দাও সন্ত্রাসবাদ কাকে বলে। জাতিবাদ আর গণতন্ত্রের ঈশ্বরকে গুঁড়িয়ে দিতে আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত।’
আবুবকর আল বাগদাদি যে কেবল কথার কথাই বলেন নি, প্রতিদিন সেটার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রত্যহ টিভি চ্যানেলের পর্দায় ভাসছে মারাত্মক অস্ত্র হাতে আইএসআইএস বাহিনীর ছবি। সামরিক ভ্যান বা জাপানি টয়োটা গাড়িতে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আরব মরুর প্রান্তর। তাঁদের হাতে অর্ধচন্দ্র বা ইসলামী ক্রিসেন্ট অঙ্কিত পতাকা। পতাকায় বড় বড় আরবি হরফে লেখা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।
আরব জাতীয়তাবাদ থেকে বিকশিত হয়ে ইসলাম ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সরকার ও শাসনের দাবি, সেই দাবি বাস্তবায়নের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম বা জিহাদ এবং আবুবকর আল বাগদাদির খেলাফত প্রতিষ্ঠাকে পশ্চিমা দুনিয়া ও তাদের মধ্যপ্রাচ্যের তাঁবেদাররা এক কথায় সন্ত্রাসবাদ/জঙ্গিবাদ বা আল-কায়েদার ষড়যন্ত্র বললেও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলছেন অন্য কথা। তারা মনে করেন, ‘শহিদ সাদ্দাম হোসেন কবরে আবার উদ্দাম হয়ে উঠেছেন।’ এ কথার ব্যাখ্যায় বলা যায়, ইরাকসহ আরব জগতে বাথ পার্টি নিষিদ্ধ বা ছত্রভঙ্গ হলেও একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায় নি। এখনও জীবিত বহু বাথ সদস্য, সাদ্দাম-ভক্ত ফৌজ। এত দিন যারা আত্মগোপন করেছিল তিকরিতে, মসুলে, ফোরাত বা ইউফ্রেতিস নদীর দুই তীরে, তারা ক্রমেই ফালুজায় সক্রিয় হয়েছে। তারা সঙ্গে পেয়েছে ক্ষুব্ধ, বিরক্ত, অত্যাচারে অতিষ্ঠ ইরাকি জনতাকে। ইরাকের অব্যবস্থা ও কুশাসন প্রমাণ করেছে, পশ্চিমের তাঁবেদারদের দ্বারা শুধু শিয়াদের দিয়ে রাষ্ট্র চালানো যায় না। কুর্দরা আছে, সুন্নি আরবরা আছে, আছে অসংখ্য আরব খ্রিস্টানও। সরকার, প্রশাসন আর রাজনীতিতে তাদের হিস্যা কোথায়? ১১ বছর ধরে তাঁবেদার মালিকি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে ইরাক শাসন করছেন। রাশিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশের সাহায্য ছাড়া এক কদমও চলতে পারছে না মালিকির পুতুল সরকার। ইরাকিরা বিশ্বাস করেন, বিদেশী এজেন্টরা সরকার চালাচ্ছে এবং দেশ লুট করছে।
ইরাকের শাসনগত সঙ্কটের সঙ্গে এসে মিশেছে লিবিয়ায় গাদ্দাফি-পরবর্তী অরাজকতা, লুটপাট ও নির্যাতন। সিরিয়ায় লাগাতার গোষ্ঠীগত গৃহযুদ্ধ, অমানবিক হত্যাকাণ্ড। মিশরের গণতন্ত্রহীনতা ও সামরিক স্বৈরাচারীর অত্যাচারের নির্মমতা। কুশাসন-সৃষ্ট উৎপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ঘৃণা, ক্ষোভ আর নীরব প্রতিবাদই আরব বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতা। আরবে বিদ্যমান সব সঙ্কটের ক্ষেত্রেই পশ্চিমা বিশ্বের কালো হাত দেখা যাচ্ছে, যে আগ্রাসনী হাতের কবল থেকে স্থায়ী সমাধান খুঁজছে বিক্ষুব্ধ আরব জাতিসত্তা। কিন্তু সুরাহার রাস্তা কোথায়? পদলেহী সরকারগুলোর শাসনে? পশ্চিমা আগ্রাসনে? নাকি আবুবকর আল বাগদাদির নেতৃত্বাধীন খেলাফতের ‘জমহুরিয়াত মা আল ইসলাম’ স্লোগানে? গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে সামনে রেখে এ প্রশ্নের উত্তর এখনই কেউ দিতে পারবে না।

No comments

Powered by Blogger.